গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
সরকারি এডওয়ার্ড কলেজ, পাবনা।
টার্ম
পেপার
v শিরোনামঃ
বাংলাদেশে নারীর ক্ষমতায়নে বিদ্যামান সমস্যা ও সম্ভাবনা।
অনার্স ২য় বর্ষ
(২০১০-২০১১) শিক্ষার্থীর চুরান্ত পরীক্ষার আবশ্যিক অংশ হিসেবে জাতীয়
বিশ্ববিদ্যালয়ের নিদের্শনায় এই টার্ম পেপারটি প্রস্তুত করা হল।
তত্ত্বাবধায়ক-
রেহানা পারভীন
সহকারী অধ্যাপক, অথর্নীতি বিভাগ
সরকারি এডওয়ার্ড কলেজ, পাবনা।
প্রণয়নে-
মোঃ ওবাইদুর রহমান জিলানী
বি,এস,এস অনার্স ২য় বর্ষ
রোলঃ ৯৭৭৬০৯৬
শিক্ষাবর্ষঃ ২০১০-২০১১
সরকারি এডওয়ার্ড কলেজ, পাবনা।
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
সরকারি এডওয়ার্ড কলেজ, পাবনা।
টার্ম
পেপার
অনার্স ২য় বর্ষ
(২০১০-২০১১) শিক্ষার্থীর চুরান্ত পরীক্ষার আবশ্যিক অংশ হিসেবে জাতীয়
বিশ্ববিদ্যালয়ের নিদের্শনায় এই টার্ম পেপারটি প্রস্তুত করা হল।
তত্ত্বাবধায়ক-
রেহানা পারভীন
সহকারী অধ্যাপক, অথর্নীতি বিভাগ
সরকারি এডওয়ার্ড কলেজ, পাবনা।
প্রনয়নে-
মোঃ ওবাইদুর রহমান জিলানী
বি,এস,এস অনার্স ২য় বর্ষ
রোলঃ ৯৭৭৬০৫৭
শিক্ষাবর্ষঃ ২০১০-২০১১
সরকারি এডওয়ার্ড কলেজ, পাবনা।
সূচি পত্রঃ
অধ্যায় |
বিষয় |
পৃষ্ঠা |
১ম অধ্যায় |
প্রস্তুতকারী
ছাত্রের ঘোষনা তত্ত্বাবধায়কের
ঘোষনা মুখবন্ধ কৃতজ্ঞতা স্বীকার |
১ ২ ৩ ৪ |
২য় অধ্যায় |
ভূমিকা টার্ম পেপারের
উদ্দেশ্য সাহিত্য পযার্লোচনা কায্যকরী সংজ্ঞা টার্ম পেপারের পরিধি উপাত্তের উৎস ও সংগ্রহ পদ্ধতি সীমা বদ্ধতা |
|
৩য় অধ্যায় |
নারীর
অবস্থান এবং উন্নয়ন কাযর্ক্রম সম্পর্ক নারীর অবস্থান এবং ক্ষমতায়ন নারী ক্ষমতায়ন ও উন্নয়ন বাংলাদেশের সমাজের প্রেক্ষাপটে নারী |
|
৪র্থ অধ্যায় |
নারী বান্ধব বিভিন্ন আইন- মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীন বাস্তবায়িত বিভিন্ন প্রকল্প
সমূহ- সম অধিকার, সম সুযোগ-সবার জন্যই উন্নয়ন উন্নয়নের জন্য নারীর ক্ষমতায়ন- উপসংহার- সহায়ক
গ্রন্থপুঞ্জি সুপারিশ মালা |
|
প্রস্তুতকারী ছাত্রের ঘোষনা
আমি এই মর্মে ঘোষনা করছি যে, বাংলাদেশে
নারীর ক্ষমতায়নে বিদ্যামান সমস্যা ও সম্ভাবনা এর ভূমিকা শীষর্ক বিষয় সম্পর্কে গুণীজন এবং সাধারণ ব্যক্তিদের আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক সাক্ষাৎকার
গ্রহণ পূবর্ক বাংলাদেশে নারীর ক্ষমতায়নে বিদ্যামান সমস্যা ও সম্ভাবনা
একটি সমীক্ষন গবেষনা মূলক টার্ম পোপরটি প্রস্তুত করছি।
আমি এই মর্মে আরো ঘোসনা করছি যে, এই
গবেষনা কর্মটি আমার মুল গবেষনা কাজ এবং এটি মূলত জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ২য়
বর্ষ শিক্ষর্থীর চুরান্ত পরীক্ষার ২২৯৬ নং কোর্সের আংশিক সার্থ পুরনার্থে
প্রস্তুতকৃত।
শিক্ষার্থীর নাম-
মোঃ ওবাইদুর রহমান জিলানী
বি,এস,এস অনার্স ২য় বর্ষ
রোলঃ ৯৭৭৬০৫৭
শিক্ষাবর্ষঃ ২০১০-২০১১
সরকারি এডওয়ার্ড কলেজ, পাবনা।
তত্ত্বাবধায়ক
শিক্ষকের ঘোষনাঃ-
আমি এই মর্মে ঘোষনা করছি যে, সরকারি এডওয়ার্ড
কলেজের অর্থনীতি সম্মান বিভাগের ২য় বর্ষের ছাত্র মোঃ ওবাইদুর রহমান জিলানী কর্তৃক
প্রস্তুতকৃত “বাংলাদেশে নারীর ক্ষমতায়নে বিদ্যামান
সমস্যা ও সম্ভাবনা” গবেষনা মূলক টার্ম পেপারটি একটি
প্রকৃত টার্ম পেপার।
তত্ত্বাবধায়ক-
রেহানা পারভীন
সহকারী অধ্যাপক, অথর্নীতি বিভাগ
সরকারি এডওয়ার্ড কলেজ, পাবনা।
মুখবন্ধ_
জ্ঞানের একটি শাখা
হিসেবে কি উন্নত কি উন্নয়নশীল উভয় বিশ্বে অর্থনীতি বিষয়ে অধ্যায়ন ও গবেষনা কাজ
এগিয়ে চলছে। গবেষনা হলো সত্য অনুসন্ধানের বৈজ্ঞানিক প্রক্রিয়া।
বর্তমান সমাজ জীবনে বহুমূখি অনুধাবন এবং তার কারন নির্ণয় গবেষনার প্রয়োজনিয়তা
অনস্বীকাjয।
আমি সরকারি এডওয়ার্ড কলেজের
অর্থনীতি সম্মান বিভাগের ২য় বর্ষের ছাত্র। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ২য় বর্ষ শিক্ষর্থীর চুরান্ত
পরীক্ষার ২২৯৬ নং কোর্সের আংশিক স্বার্থ পুরনার্থে আমার গবেষনা মূলক টার্ম পেপারটি প্রতিবেদন
লিখন।
এই লক্ষ্যকে সামনে রেখে আমাকে অর্থনীতি কোর্সের সহিত
সংগতি পূর্ণ বিষয় হিসেবে “বাংলাদেশে নারীর ক্ষমতায়নে বিদ্যামান সমস্যা ও সম্ভাবনা”
একটি সমীক্ষন গবেষনামূলক টার্ম পেপারটি প্রস্তুতের দায়িত্ব দেওয়া হয়। আমি আমার
গবেষনা প্রতিবেদনের বাস্তবতা তুলে ধরার চেষ্টা করছি।
তৃতীয় বিশ্বের জনবহুল সমস্যা সম্বলিত দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান শীর্ষে। অত্যধিক জনসংখ্যা
অধ্যুষিত ক্ষুদ্রায়তন বিশিষ্ট এ দেশটিতে হাজারও সমস্যা বিদ্যমান। নানাবিধ সমস্যার মাঝে ‘‘বাংলাদেশে নারীর
ক্ষমতায়নে বিদ্যামান সমস্যা ও সম্ভাবনা ” বিষয়টি একটি জাতীয় সমস্যা এবং বহুল আলোচিত বিষয় হিসেবে
চিহ্নিত করা হয়েছে। বাংলাদেশে প্রচলিত সামাজিক মূল্যবোধ ও জীবনধারা নারীকে
বিচিত্রভাবে প্রতারিত ও ক্ষত বিক্ষত করেছে। পুরুষ শাসিত সমাজে
পুরুষ দ্বারা ক্রমাগত
শাসন আর কোণঠাসাকরণ নারীকে এমনভাবে দমন করছে
যার মূল অর্থ দাঁড়াচ্ছে
সভ্যতাকে পেছনের দিকে ঠেলে দেওয়া। এ বিষয়ে উন্নত, উন্নয়নশীল ও অনুন্নত কোনো দেশেই পার্থক্য পরিলক্ষিত হচ্ছে না। তাই দেখা যায়, গত কয়েক দশকের উন্নয়ন প্রচেষ্টায় বাংলাদেশের নারী সমাজের অবস্থানে উল্লেখযোগ্য
কোনো পরিবর্তন আসেনি।
কৃতজ্ঞতা স্বীকার-
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক আয়োজিত অনার্স ২য় বর্ষে
আবশ্যিক বিষয় হলো টার্ম পেপার প্রনয়ন করা, যা পরবর্তীতে আমাদের গবেষণার মতো
অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে উৎসাহ ও পথ নির্দেশনা দান করবে।
গভীর শ্রদ্ধা ও অকুন্ঠ চিত্তে কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি। অত্র
টার্ম পেপারটি প্রনয়নের সুযোগ্য তত্ত্বাবধায়ক রেহানা পারভীন ম্যামেকে তার
সুচিন্তিত মতামত বাস্তব অভিজ্ঞতা, গঠনমূলক নির্দেশনা, আন্তরিক উপদেশ ও সাবির্ক
সহযোগিতা আমার টার্ম পেপারটি প্রনয়নে সাহায্য করেছেন। টার্ম পেপারটি প্রনয়নের
বিভিন্ন তথ্য, উপাত্ত, পুস্তক-পুস্তিকা ইত্যাদি সরবরাহ করার জন্য সরকারি এডওয়ার্ড কলেজের
অর্থনীতি বিভাগের সকল শিক্ষক-শিক্ষিকা, কর্মচারী-কর্মকর্তা সকলের প্রতি আমি
আন্তরিকভাবে কৃতজ্ঞ।
সম্মান ২য় বর্ষের
ছাত্র হিসেবে আবশ্যকীয় নিবন্ধন রচনা সার্থকভাবে সম্পূণ করা এক প্রকার কঠিন কাজ এর
জন্য প্রয়োজন নানাবিধ বই পত্র নির্দেশনা, সাহায্য সহযোগিতা প্রয়োজনে ধৈয্য ও
কর্মনিষ্ঠতা। এই ক্ষুদ্র অথচ জটিল গবেষনাটি সম্পূর্ণ করতে গিয়ে আমাকে সাহায্যে
সহযোগিতা এ সহানুভূতি প্রদান করেছেন তা না হলে আমার গবেষনা কাজটি অসমপূর্ণ থেকে
যেত বলে আমার বিশ্বাস। যে কারণে আমি আমান সকল স্যার এবং ম্যামদের কাছে চির কৃতজ্ঞ।
বিনীত_
মোঃ ওবাইদুর রহমান জিলানী
ভূমিকাঃ-
নারী দিবস উপলক্ষে চারদিকে কত আয়োজন। কিন্তু অবরোধবাসিনী নারীর অবস্থান কতটুকু পরিবর্তন হয়েছে ? অচলায়তন ভেঙ্গে নারীর
এগিয়ে চলা বাধাগ্রস্ত হয়েছে বারবার।
স্বাধীনতা যুদ্ধে নারীর অবদান সেভাবে আলোচনায় আসে নি। স্বাধীনতার ইতিহাসে নারী নিযাতন ও ধর্ষনের কথা
যতটা উঠে এসেছে , নারীর প্রত্যক্ষ অংশগ্রহনের কথা
সেভাবে উঠে আসে নি। কিছু গবেষণা ও সাহিত্যকর্মে, বিশেষ করে গল্প-উপন্যাসে তাদের কথা উঠে এসেছে। কিন্তু ফলাও করে তাদের অবদানের কথা সেভাবে লিখেন নি কেউ। এ ব্যর্থতা আমাদের। এ ব্যর্থতা পুরুষতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থার ব্যবসায়িক
মনোভাবাপন্ন লেখক গোষ্ঠীর, ইতিহাসবেত্তাদের। ব্যর্থতা আমাদের গণমানুষের। নারী উন্নয়ন
নীতিকে পাশ কাটিয়ে আমরা নানাবিধ উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রণয়ণ করেছি। স্বাধীনতার ৪২ বছরে নারী উন্নয়নের ধারা বিশ্লেষণ করলে
দেখা যায়,ঠিক যেভাবে রুপরেখা প্রণীত হয়েছে ,তার সিকিভাগও বাস্তবায়ন হয়নি। ধর্মীয় ও সামাজিকভাবে নানাভাবে বাধাগ্রস্ত হয়েছে নারী উন্নয়ন। রাজনৈতিক ইস্যু বিতর্কের সৃষ্টি বৈ কিছু করতে পারে নি।
বর্তমান বিশ্বের সবার্ধিক আলোচিত
বিষয়সমূহের মধ্যে একটি হচ্ছে নারীর ক্ষমতায়ন। বহুল আলোচিত এ প্রত্যয়টিকে এখন সামাজিক উন্নয়নের সূচক হিসেবে বিবেচনা করা হয়। কেবলমাত্র মানবেতর অবস্থা থেকে নারীর মুক্তি বা নারী উন্নয়নের
জন্যই নয়, পৃথিবী মুখোমুখি এমন সকল সমস্যার সমাধানে প্রধান ও প্রথম ধাপ হিসাবে নারীর ক্ষমতায়নকে
প্রয়োজনীয় বলে বিবেচনা করা হচ্ছে। কেবল আন্তর্জাতিক পরিসরে নয়, বাংলাদেশেও স্থানীয় পর্যায় থেকে শুরু করে জাতীয় পরিসরে যে কোনো নীতি
নির্ধারনী আলোচনায় বা সমস্যা সমাধানে নারীর ক্ষমতায়নকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু আদতে হচ্ছে টা কি ? পিতৃতান্ত্রিক মূল্যবোধ,
পিতৃতন্ত্রের সপক্ষে রচিত আইন কানুন, ধর্মীয় আবেগ
অনুভূতি, আধুনিকায়ন উন্নয়ন কৌশলের অনুসরণ, পরিবেশ বিপর্যয় ইত্যাদি নানা কারণে বাংলাদেশে নারী উন্নয়ন
বাধাগ্রস্ত হয়েছে। নারী বান্ধব
আইনগুলো বাস্তবায়নের প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয়েছে। নারীর প্রতি দৃষ্টি ভঙ্গি পরিবর্তন তো দূরে থাক, নারীকে মানুষ ভাবতেই যেন বয়ে গেছে পুরুষতান্ত্রিক সমাজের।
টার্ম পেপারের উদ্দেশ্যঃ
বাংলাদেশে নারীর ক্ষমতায়নে বিদ্যামান সমস্যা ও সম্ভাবনা
এর ভূমিকা নিরুপন করাই টার্ম পেপারের মুখ্য উদ্দেশ্য। বর্তমান বিশ্বের সর্বাধিক
আলোচিত বিষয়সমূহের মধ্যে একটি হচ্ছে নারীর ক্ষমতায়ন। বহুল আলোচিত এ
প্রত্যয়টিকে এখন সামাজিক উন্নয়নের সূচক হিসেবে বিবেচনা করা হয়। কেবলমাত্র মানবেতর
অবস্থা থেকে নারীর মুক্তি বা নারী উন্নয়নের জন্যই নয়,
পৃথিবী মুখোমুখি এমন
সকল সমস্যার সমাধানে প্রধান ও প্রথম ধাপ হিসাবে নারীর ক্ষমতায়নকে
প্রয়োজনীয় বলে বিবেচনা করা হচ্ছে। কেবল আন্তর্জাতিক পরিসরে নয়,
বাংলাদেশেও স্থানীয়
পর্যায় থেকে শুরু করে জাতীয় পরিসরে যে কোনো নীতি নির্ধারনী
আলোচনায় বা সমস্যা সমাধানে নারীর ক্ষমতায়নকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। এই কারনে আমরা
টার্ম পেপারটি প্রনয়নের দ্বারা যে কোন বিষয় সম্পর্কে সু-স্পষ্ট ধারনা লাভ করতে
পারি, তাই টার্ম পেপারের উদ্দেশ্য হলো একটি বিষয় সম্পর্কে পূর্ণ ধারনা লাভ করা।
সাহিত্য পযার্লোচনাঃ
“বাংলাদেশে নারীর ক্ষমতায়নে বিদ্যামান সমস্যা ও সম্ভাবনা” বিষয়টির উপর জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মান ২য় বর্ষে শিক্ষার্থী কর্তৃক
পূবে কোন টার্ম পেপার হয়েছে বলে আমার জানা নেই। জাতীর অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টির
উপর বাংলাদেশর সমীক্ষা অনুযায়ি সকল রিপোর্ট এবং অন্যান্য বছরের সকল রির্পোটের
ভিত্তিতে এ ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
কায্যকরী
সংজ্ঞাঃ
তৃতীয় বিশ্বের জনবহুল সমস্যা সম্বলিত দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান শীর্ষে। অত্যধিক জনসংখ্যা
অধ্যুষিত ক্ষুদ্রায়তন বিশিষ্ট এ দেশটিতে হাজারও সমস্যা বিদ্যমান। নানাবিধ সমস্যার মাঝে ‘‘বাংলাদেশে নারীর ক্ষমতায়নে বিদ্যামান সমস্যা ও সম্ভাবনা ” বিষয়টি একটি জাতীয় সমস্যা এবং বহুল আলোচিত বিষয় হিসেবে
চিহ্নিত করা হয়েছে। বাংলাদেশে প্রচলিত সামাজিক মূল্যবোধ ও জীবনধারা নারীকে
বিচিত্রভাবে প্রতারিত ও ক্ষত বিক্ষত করেছে। পুরুষ শাসিত সমাজে
পুরুষ দ্বারা ক্রমাগত
শাসন আর কোণঠাসাকরণ নারীকে এমনভাবে দমন করছে
যার মূল অর্থ দাঁড়াচ্ছে
সভ্যতাকে পেছনের দিকে ঠেলে দেওয়া। এ বিষয়ে উন্নত, উন্নয়নশীল ও অনুন্নত কোনো দেশেই পার্থক্য পরিলক্ষিত হচ্ছে না। তাই দেখা যায়, গত কয়েক দশকের উন্নয়ন প্রচেষ্টায় বাংলাদেশের নারী সমাজের অবস্থানে উল্লেখযোগ্য
কোনো পরিবর্তন আসেনি। বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার অর্ধেক নারী। যে দেশের অর্ধেক
জনসংখ্যা নারী সে দেশের নারীর অবদমন অধঃস্তনতা, অনগ্রসরতা প্রকারান্তরে পরিবার, সমাজ তথা দেশের
পিছিয়ে পরার সংকেত প্রদান করে।
টার্ম পেপারের
পরিধিঃ
জ্ঞাণের একটি শাখা হিসেবে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অনার্স
২য় বর্ষে ছাত্র/ছাত্রীদের আবশ্যিক বিষয় হলো টার্ম পেপার প্রনয়ন করা, জ্ঞান অর্জনের
অন্যান্য শাখার ন্যয় টার্ম পেপারের মাধ্যমে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মান ২য়
বর্ষের ছাত্র/ছাত্রীরা জ্ঞান অর্জন করতে
পারে। এছাড়া পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে সমাজ ও সামাজিক এবং অর্থনৈতিক বিষয় সম্পর্কের
আলোচনা অপরিবর্তিত থাকতে পারে না। তাই মানুষের আর্থ সামাজিক ও অর্থনীতির ক্রম
পরিবর্তনের সাথে সাথে আমাদের ও দৃষ্টি ভঙ্গি নানা রকম পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। টার্ম
পেপারের দ্বারা আমরা বর্তমান ও ভবিষ্যতের দেশের আর্থ-সামাজিক ও অর্থনৈতিক অবস্থা
সম্পর্কে ধারণা লাভ বরতে পারবো।
প্রকৃত পক্ষে, টার্ম পেপার কি? কি তার বৈশিষ্ট? যার প্রেক্ষিতে
জ্ঞানের একটি শাখা হিসেবে টার্ম পেপার সু-প্রতিষ্ঠিত। এসকল প্রশ্নের যথার্থ
উত্তরের মাধ্যমে আমরা টার্ম পেপারের পরিধি সম্পর্কে ধারণা লাভ করতে পরব।
উপাত্তের উৎস ও সংগ্রহ পদ্ধতিঃ
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ২য় বর্ষ শিক্ষার্থীর কাছে
একটি নতুন বিষয় হলো টার্ম পেপার, যা সকল শিক্ষার্থীদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ
বিষয়। টার্ম পেপার তৈরি করার জন্য আমি বিভিন্ন ম্যাগাজিন, পত্র-পত্রিকা, বিভিন্ন
গ্রন্থাবলি থেকে সংগ্রহ করেছি, এবং বেশির ভাগ তথ্যই প্রাথমিক ও মাধ্যমিক ভাবে
সংগ্রহ করেছি।
সীমা বদ্ধতাঃ
টার্ম
পেপারের আলোচ্য বিষয় অত্যান্ত ব্যাপক, কিন্তু সময়ের সল্পতার কারণে প্রাথমিক উৎস
থেকে উপাত্ত সংগ্রহ করা সম্ভব হয়নি। এই সংক্রান্ত প্রচুর বই পত্র থাকলেও সে গুলো
সংগ্রহ করা সম্ভব হয়নি। সে কারণে লাইব্রেরীতে প্রাপ্ত বইপত্র ও গবেষনা পত্রের উপর
নির্ভর করতে হয়েছে। এছাড়াও অনেক ক্ষেত্রে পরিসংখ্যান গত তথ্য সহজ লভ্য ছিলনা।
নারীর
অবস্থান এবং উন্নয়ন কাযর্ক্রম
সম্পর্কঃ
তৃতীয় বিশ্বের জনবহুল সমস্যা সম্বলিত দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান শীর্ষে। অত্যাধিক জনসংখ্যা অধ্যুষিত ক্ষুদ্রায়তন বিশিষ্ট এ দেশটিতে হাজারও সমস্যা বিদ্যমান। নানাবিধ সমস্যার মাঝে “বাংলাদেশে নারীর ক্ষমতায়নে বিদ্যামান
সমস্যা ও সম্ভাবনা” বিষয়টি একটি জাতীয় সমস্যা এবং বহুল আলোচিত বিষয় হিসেবে
চিহ্নিত করা হয়েছে। বাংলাদেশে প্রচলিত সামাজিক মূল্যবোধ ও জীবনধারা নারীকে
বিচিত্রভাবে প্রতারিত ও ক্ষত বিক্ষত করেছে। পুরুষ শাসিত সমাজে
পুরুষ দ্বারা ক্রমাগত
শাসন আর কোণঠাসাকরণ নারীকে এমনভাবে দমন করছে
যার মূল অর্থ দাঁড়াচ্ছে
সভ্যতাকে পেছনের দিকে ঠেলে দেওয়া। এ বিষয়ে উন্নত, উন্নয়নশীল ও অনুন্নত কোনো দেশেই পার্থক্য পরিলক্ষিত হচ্ছে না। তাই দেখা যায়, গত কয়েক দশকের উন্নয়ন প্রচেষ্টায় বাংলাদেশের নারী সমাজের অবস্থানে উল্লেখযোগ্য
কোনো পরিবর্তন আসেনি। বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার অর্ধেক নারী। যে দেশের অর্ধেক
জনসংখ্যা নারী সে দেশের নারীর অবদমন অধঃস্তনতা, অনগ্রসরতা প্রকারান্তরে পরিবার, সমাজ তথা দেশের পিছিয়ে পরার সংকেত প্রদান করে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশের সমাজবিজ্ঞানী এবং নীতি নির্ধারকেরা নারীর
অবস্থান এবং এর সাথে
সংশ্লিষ্ট উন্নয়নসূচক কার্যক্রমের বিষয়টি
গভীর আগ্রহের সাথে বিশ্লেষণের চেষ্টা করেছেন। দেখা যাচ্ছে, বাংলাদেশের সরকার প্রধান এবং বিরোধী নেতৃত্বে নারী নেতৃত্ব থাকা সত্ত্বেও নারী বিষয়ক যে সিদ্ধান্ত গৃহীত
হচ্ছে তা চারপাশের পুরুষদের দ্বারা পরিচালিত হয়। ফলে, এখানে ঐতিহাসিকভাবেই সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি হচ্ছে শিক্ষা, কর্মসংস্থান এবং
অন্যান্য সামাজিক সেবামূলক
কার্যক্রমে নারী পুরুষের সম অবস্থানের প্রতি
অনীহা প্রকাশ করা। আমাদের সমাজ ব্যবস্থার মধ্যে
ধর্মীয় অনুশাসন, বিবাহ,
পরিবার উত্তরাধিকার ব্যবস্থা অর্থাৎ মূল কথা পারিবারিক পযায়ে একজন নারী সঠিকভাবে জীবন পরিচালনা
করতে পারছে না। সে জন্য বাংলাদেশ সরকার নারীর অবস্থান উন্নয়নে পর্যাপ্ত
পদক্ষেপ গ্রহণ করা সত্ত্বেও নারী তার সঠিক মর্যাদা থেকে বঞ্চিত
হচ্ছে এবং ক্রমশ
দুর্দশাগ্রস্থ অবস্থায় পতিত হচ্ছে। বর্তমান প্রবন্ধে তাই
বাংলাদেশের সমাজে
নারীর অবস্থান সংশ্লিষ্ট উন্নয়ন কার্যক্রমের
বিভিন্ন দিকগুলো আলোচনা করার প্রয়াস নেওয়া হয়েছে।
নারীর
অবস্থান এবং ক্ষমতায়নঃ পরিবার,
সম্প্রদায় এবং বৃহত্তর সামাজিক পরিমণ্ডলে Status of women বা নারীর অবস্থানকে সংজ্ঞায়িত
করা হয়ে থাকে বিভিন্ন বস্তুগত এবং সামাজিক সম্পদ যেমন-খাদ্য,
পুষ্টি, আয়, জ্ঞান,
শক্তি, সম্মান, জমি বণ্টন এবং অন্যান্য সম্পদ প্রাপ্তির ভিত্তিতে। নারীর অবস্থান
প্রত্যয়টির সংজ্ঞা নির্ধারণে বিভিন্ন সংস্কৃতিগত
পার্থক্য বিদ্যমান। তবে এর সংস্কৃতিমুক্ত সংজ্ঞা এভাবে দেওয়া যেতে পারে- ne that is able to differentiate the status of women from men
in the same society is to speak of the control that people have over their
lives. তবে একটি দেশে প্রদত্ত সামাজিক কাঠামো, ধর্ম এবং আইনগত অধিকারের ভিত্তিতে status of women বা নারীর অবস্থানকে বিশ্লেষণ করা যায়।
কিন্তু বিষয়টি নির্ভর করে সামাজিক উন্নয়নে
একজন নারী কতটুকু সক্ষমভাবে অবদান রাখতে পারে তার
উপর।
নারী ক্ষমতায়ন ও উন্নয়নঃ
তৃতীয়
বিশ্বের দেশগুলো উন্নয়নের গুরুত্ব খুব অনুধাবন করছে। কারণ এখানে উৎপাদনের কলা কৌশলের
বিকাশ হচ্ছে না, আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে ভারসাম্য থাকছে না, জনসংখ্যা বাড়ছে দ্রুত গতিতে, জীবনধারণ হয়ে পড়ছে
দুর্বিসহ। ফলে
উন্নয়ন ব্যহত হচ্ছে। A.M.M. Hoogvelt এর
মতে, উন্নয়ন হল সমাজের
বৃদ্ধি এবং পরিবর্তন প্রক্রিয়ার একটি স্বাধীন প্রত্যয় যা সমাজকে গতিশীল করে। সমসাময়িক বিশ্বে
উন্নয়ন প্রত্যয়টি এসেছে
একটি ফ্যাসেনেবল আইডিওলজি হিসেবে। এ আইডিওলজি মানুষের
মধ্যে আত্ম-উপলব্ধির
জন্ম দেয় এবং সরকারকে উদ্বুদ্ধ করে। উন্নয়ন এমন একটি
প্রত্যয় যা মানুষকে
আত্মসচেতন করে এবং পূর্ব নির্ধারিত লক্ষ্য
অর্জনের জন্য মানুষকে
প্রতিজ্ঞাবদ্ধ করে। পূর্ব নির্ধারিত
লক্ষ্য হল মূলত অর্থনৈতিক যা জনসাধারণের পুষ্টি, স্বাস্থ্য সেবা, গড় আয়ু বৃদ্ধি করা, শিশু মৃত্যু হার রোধ, শিক্ষা,
উন্নত স্যানিটেশন ব্যবস্থা, বাসস্থান,
কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি ইত্যাদি উন্নয়নে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। সমাজবিজ্ঞানী Horowitz তাঁর উন্নয়নের সংজ্ঞা দিতে
গিয়ে বলেছেন-উন্নয়ন প্রক্রিয়া একটি পুরাতন ধাপ এর মধ্যে নতুন ধাপকে সুনির্দিষ্টভাবে উদঘাটিত করে। সমাজবিজ্ঞানীদের কাছে উন্নয়নের ধারণাটি প্রকাশিত হয় একটি common sense হিসেবে। যেমন : attitude,
যাকে সমাজবিজ্ঞানীরা self definition বলে থাকেন। Horowitz আরও বলেছেন
Development is an aesthetic approach এখানে
চিন্তাভাবনায় ভিন্নতা
প্রদর্শিত হয়। মূলত উন্নয়ন নির্ভর
করে জ্ঞানের উপর যা নতুন জ্ঞান বা তথ্যের উন্মোচন করে। Human
development report: ১৯৯৪ অনুসারে মানুষ অবশ্যম্ভাবীভাবে উন্নয়নের কেন্দ্রবিন্দু। বলা হয়ে থাকে “Development of the people, by the
people for the people- কেননা প্রতিটি সমাজে
সামাজিক জীব হিসেবে মানুষ স্বাস্থ্য, পুষ্টি, শিক্ষা,
কর্মসংস্থান ইত্যাদি ক্ষেত্রে বিনিয়োগের পক্ষ সমর্থন করে। আর এসকল উন্নয়ন সূচক
মানুষকে যুক্তিশীল
সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে সাহায্যকরে।
উন্নয়নে
নারী, উন্নয়ন এবং নারী : ‘উন্নয়নে নারী’র সম্পৃক্ততার ধারণাটি ১৯৫৩ থেকে ১৯৭০ সালের আধুনিকায়ন তত্ত্বের বিকাশের সাথে সম্পর্কযুক্ত। আধুনিকায়ন তত্ত্বের
মতে, সনাতনী সামাজিক ব্যবস্থা অনেক
কর্তৃত্বপরায়ন ও পুরুষশাসিত আধুনিক সমাজ ব্যবস্থা গণতান্ত্রিক ও সমতাধর্মী। অধিকাংশ নারীবাদী এ
দৃষ্টিভঙ্গিকে সঠিকভাবে গ্রহণ করেছেন। তবে কিছু সংখ্যক
প্রতিবাদী নারীবাদী এই দৃষ্টিভঙ্গিকে সমালোচনা করেছেন। কারণ তা উন্নয়নশীল ও তৃতীয় বিশ্বের নারীর অবস্থানের অনেক
ক্ষতি সাধন করে। ‘উন্নয়নে নারী’ এ ধারণার মূল লক্ষ্য
হচ্ছে নারীকে আইনে প্রশাসনিক পরিবর্তনের মাধ্যমে
অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় অন্তর্ভূক্ত করা।
নারীর উন্নয়নঃ
ক্যারোলিং মোজারের মতে ‘নারীর উন্নয়ন’ এ দৃষ্টিভঙ্গির বিকাশ ঘটে ১৯৭০ এর দশকের মধ্যভাগে। আধুনিকায়ন তত্ত্বের সমালোচনা থেকে এ ধারণার সূত্রপাত। এই ধারণার মূল লক্ষ্য নারীদের উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় সম্পৃক্ত হবার কতিপয়
দিক নির্দেশনা প্রদান করে। যেমন : ১. নারী ও উন্নয়নের মধ্যকার সম্পর্ক নির্দিষ্ট করে
২. অর্থনৈতিক উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় নারীর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকাকে
সমর্থন করে। ৩. সরকারি ও বেসরকারি খাতে নারীর ভূমিকা বিষয়টিকে জোড় দেয়। ১৯৮০-এর দশকে নারী ও উন্নয়ন এ দৃষ্টিভঙ্গিটি সমালোচনা করে জেন্ডার এবং উন্নয়ন’ ধারণার বিকাশ ঘটে। এই ধারা নারীর সামাজিক
ও রাজনৈতিক জীবনের সব দিককে আলোকপাত করার প্রচেষ্টা চালায়। জাতি, ধর্ম,
শ্রেণি সকল ক্ষেত্রে সকলের সমতা, দারিদ্র্যতা থেকে পরিত্রাণ, নারীর ক্ষমতায়ন, নারীর সমতা, গৃহ অভ্যন্তর তথা রাষ্ট্রের উন্নয়নে অন্যতম সহায়ক হিসেবে নারীকে বিবেচনা করে।
বাংলাদেশের সমাজের
প্রেক্ষাপটে নারীঃ
১৯৭২ সনে নবগঠিত রাষ্ট্র বাংলাদেশের সংবিধান রচিত হয়। জাতির জনক
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রত্যক্ষ নির্দেশনায়
রচিত এ সংবিধানে নারীর মানবাধিকার ও মৌলিক স্বাধীনতা
নিশ্চিত করা হয়েছে। বাংলাদেশের সংবিধানে ১০, ১৫, ১৭, ১৮, ২৯, ২৭, ২৮, ৩১ ও ৩২ নং
অনুচ্ছেদে বিভিন্নভাবে নারীর অধিকার, সমঅধিকার ও মানবাধিকারের কথা
উল্লেখ করা হয়েছে। সকলের জ্ঞাতার্থে এখানে তা পূনরাল্লেখ করা হল। উপরে আলোচিত বাংলাদেশের সংবিধানের বিভিন্ন অনুচ্ছেদসমূহ প্রকৃতপক্ষে নারী ও পুরুষের কর্ম, সামাজিক ও
অর্থনৈতিক আইনগত ক্ষেত্রে সম অধিকারের দিক তুলে
ধরা হয়েছে। তবে বাস্তবে নারীকে সাধারণ মানুষ হিসেবে খুব কম স্বীকৃতি দেওয়া
হয়েছে। নারীর কর্মক্ষেত্রে সুযোগ এখনও সীমিত, তেমনি নিরাপত্তা,
অর্থনৈতিক স্বনির্ভরতা, শিক্ষা, সিদ্ধান্ত গ্রহণ সকল ক্ষেত্রে তার অবস্থান অনেক
পশ্চাৎপদ।
নারীর ক্ষমতায়নঃ
নারী দিবস উপলক্ষে চারদিকে কত আয়োজন। কিন্তু অবরোধবাসিনী নারীর অবস্থান কতটুকু পরিবর্তন হয়েছে ? অচলায়তন ভেঙ্গে নারীর এগিয়ে চলা বাধাগ্রস্ত হয়েছে বারবার।
স্বাধীনতা যুদ্ধে নারীর অবদান সেভাবে আলোচনায় আসে নি। স্বাধীনতার ইতিহাসে নারী নির্যাতন ও ধর্ষনের কথা যতটা উঠে এসেছে , নারীর প্রত্যক্ষ অংশগ্রহনের কথা সেভাবে উঠে আসে নি। কিছু গবেষণা ও সাহিত্যকর্মে, বিশেষ করে গল্প-উপন্যাসে তাদের কথা উঠে এসেছে। কিন্তু ফলাও করে তাদের অবদানের কথা সেভাবে লিখেন নি কেউ। এ ব্যর্থতা আমাদের। এ ব্যর্থতা পুরুষতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থার ব্যবসায়িক মনোভাবাপন্ন লেখক গোষ্ঠীর, ইতিহাসবেত্তাদের। ব্যর্থতা আমাদের গণমানুষের। নারী উন্নয়ন নীতিকে পাশ কাটিয়ে আমরা নানাবিধ উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রণয়ণ করেছি। স্বাধীনতার ৪২ বছরে নারী উন্নয়নের ধারা বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়,ঠিক যেভাবে রুপরেখা প্রণীত হয়েছে ,তার সিকিভাগও বাস্তবায়ন হয়নি। ধর্মীয় ও সামাজিকভাবে নানাভাবে বাধাগ্রস্ত হয়েছে নারী উন্নয়ন। রাজনৈতিক ইস্যু বিতর্কের সৃষ্টি বৈ কিছু করতে পারে নি।
বর্তমান বিশ্বের সবাধিক আলোচিত বিষয়সমূহের মধ্যে একটি হচ্ছে নারীর ক্ষমতায়ন। বহুল আলোচিত এ প্রত্যয়টিকে এখন সামাজিক উন্নয়নের সূচক হিসেবে বিবেচনা করা হয়। কেবলমাত্র মানবেতর অবস্থা থেকে নারীর মুক্তি বা নারী উন্নয়নের জন্যই নয়, পৃথিবী মুখোমুখি এমন সকল সমস্যার সমাধানে প্রধান ও প্রথম ধাপ হিসাবে নারীর ক্ষমতায়নকে প্রয়োজনীয় বলে বিবেচনা করা হচ্ছে। কেবল আন্তর্জাতিক পরিসরে নয়, বাংলাদেশেও স্থানীয় পর্যায় থেকে শুরু করে জাতীয় পরিসরে যে কোনো নীতি নির্ধারনী আলোচনায় বা সমস্যা সমাধানে নারীর ক্ষমতায়নকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু আদতে হচ্ছে টা কি ? পিতৃতান্ত্রিক মূল্যবোধ, পিতৃতন্ত্রের সপক্ষে রচিত আইন কানুন, ধর্মীয় আবেগ অনুভূতি, আধুনিকায়ন উন্নয়ন কৌশলের অনুসরণ, পরিবেশ বিপর্যয় ইত্যাদি নানা কারণে বাংলাদেশে নারী উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হয়েছে। নারী বান্ধব আইনগুলো বাস্তবায়নের প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয়েছে। নারীর প্রতি দৃষ্টি ভঙ্গি পরিবর্তন তো দূরে থাক, নারীকে মানুষ ভাবতেই যেন বয়ে গেছে পুরুষতান্ত্রিক সমাজের।
একটি জরিপ দেখুন। জাতিসংঘ জনসংখ্য তহবিলের পরিচালিত এই জরিপে ময়মনসিংহ জেলার বিভিন্ন গ্রামের ৫০২ টি পরিবারের পুরুষ সদস্যরা অংশ নিয়েছিল। এই পুরুষ সদস্যরা নারীর অধিকার নিয়ে যা ভাবে তা দেখুন-
একটি জরিপে গ্রামের সবচেয়ে
প্রকট সমস্যাগুলো চিহ্নিত করতে গিয়ে মাত্র ৩% পুরুষ গ্রামবাসী নারী
নির্যাতনের কথা উল্লেখ করেছেন। বাকি ৯৭% পুরুষ এলাকার বিভিন্ন সমস্যার
মধ্যে নারী নিযাতনকে সবচেয়ে কম গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে
করেছেন। নারীর বিরুদ্ধে বৈষম্য প্রসঙ্গে ৩০% উত্তরদাতা পুরুষ কোন মন্তব্য করেননি। জরিপে উত্তরদাতা পুরুষের ৫৩.৬% নারীর অধিকারের পক্ষে তাদের
মত ব্যক্ত করেছে । আর ৬০% পুরুষ
উত্তরদাতা মন্তব্য করেছে যে নারীদের অধিকার সম্পর্কে কিছু
জানানোর দরকার নেই। ৬৫% পুরুষ ধর্মীয় বিশ্বাসের ভিত্তিতে
স্ত্রীকে মারধর করা সমর্থন করে, ৫১%পুরুষ মনে করে সমাজে নারীর অবাধে চলাফেরা উচিৎ নয়, ৬০% পুরুষ মনে করে
নারীর চলাফেরা পুরুষ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হওয়া
উচিত, ৭০% পুরুষ মনে করে মেয়েদের অবশ্যই পর্দা করা উচিত ,৯৭% নারী
নির্যাতনকে তার এলাকা বা সমাজের একটি সমস্যা বলে মনে করে না, ৬০%পুরুষ মনে করে
স্বামীর কথা মত স্ত্রীর চলা উচিত, ৯৭ % নারীর ধারণ মাতৃত্ব নারীর
একটি প্রধান চিরাচরিত বৈশিষ্ট্য , ৬০% উত্তরদাতা পুরুষ মনে করে স্বামী
পরিত্যক্তা নারীর কাছ থেকে কোন রকম অর্থনৈতিক সুবিধা বা সাহায্য পাওয়া উচিত নয়।
(তথ্যসূত্র:
জাতিসংঘ জনসংখ্য তহবিল জরিপ)
নারীর ক্ষমতায়ন বলতে সবকটি বিষয়কেই ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত করে দেখা দরকার। অবশ্য এটা ঠিক যে, নারীদের মধ্যকার একটা ক্ষুদ্র অংশ আজ সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিকভাবে অংশত ক্ষমতায়িত হয়েছেন। সময়ের পরিক্রমায় বর্তমান অবস্থায়ও এ সংখ্যা আরো বাড়বে সন্দেহ নেই। কিন্তু আমরা এ গতিতে সন্তুষ্ট থাকতে পারছি না। গতি আরো বাড়াতে হবে, সেজন্য বড়ো বড় প্রতিবন্ধকতা দূর হবার পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ অনেক পদক্ষেপও গ্রহণ করতে হবে।সংকট নিরসনে সমাজবিজ্ঞানীরা বেশ কিছু উপায়ও বের করেছেন। তাদের কথা শুনে যা জানা গেল. . .
নারীর ক্ষমতায়নের প্রাথমিক ধাপঃ-
১. পিতৃতান্ত্রিক মতাদর্শ ও নারীর অধঃস্তনতার অনুশীলনকে
চ্যালেঞ্জ এবং রূপান্তর করা।
২. কাঠামো ব্যবস্থা ও
প্রতিষ্ঠান যা নারীর প্রতি বৈষম্যকে সমন্বিত ও জোরদার করে তা পরিবর্তন
করা। যেমনঃ পরিবার, শ্রেণি, জাতি, বর্ণ, প্রথা, ও সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক কাঠামো
এবং প্রতিষ্ঠান ধর্মীয়, শিক্ষা ব্যবস্থা, প্রচার মাধ্যম,
আইন এবং উন্নয়ন মডেল ইত্যাদিসহ সবকিছু রূপান্তর করা।
৩. বস্তুগত সম্পদ জ্ঞান এবং সম্পদের উপর অভিগম্যতা ও নিয়ন্ত্রন। যদি গার্হস্থ্য দায়-দায়িত্বগুলো পরিবারের সবাই মিলে ভাগ করে করবার সংস্কৃতি তৈরি করা যায়, তাহলে নারী নিজেকে বিকশিত করবার সুযোগ পাবে। গার্হস্থ্য দায়িত্ব পালন সহজ করার জন্য প্রত্যেক ঘরে গ্যাস, পানি, বিদ্যুৎসহ অন্যান্য সু -ব্যবস্থাপনা পৌঁছে দিতে হবে। পযাপ্ত শিশু দিবা যত কেন্দ্র স্থাপন করতে হবে, যাতায়াত সুগম করতে হবে। এসব করা হলে সংসার সামলে নারী অন্য কাজে স্বাচ্ছন্দ্যের সাথে অংশ নিতে পারবে। তাছাড়া এতে পরিবারের পুরুষ সদস্যরা গার্হস্থ্য দায়িত্ব পালন করতে আগ্রহী হয়ে উঠবে। এর বাইরে বিয়ে করা না-করা এবং কটি সন্তান, কখন নেবে না-নেবে ইত্যাদি ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবার স্বাধীনতা যদি নারীরা ভোগ করতে পারে, তাহলে তাদের এই ক্ষমতায়নের পথে অগ্রসর হওয়া আরও একটু সহজ হবে। আর এসব সুযোগ সংবিধানের মাধ্যমে রাষ্ট্র নারীদের দিয়েই রেখেছে, এখন দরকার আমরা যারা তাদের সেই সুযোগ ভোগে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছি প্রতিনিয়ত, তাদের এ কাজে নিরস্ত হওয়া।
নারী আজও যেমন উত্তরাধিকারে সমঅধিকার অর্জন করতে পারে নি; এমনকি একমাত্র সন্তান মেয়ে হলেও সে সম্পত্তিতে পূর্ণ অধিকার পায় না। এই বিধান সংবিধানের সাথে সাংঘর্ষিক। নারীর ক্ষমতায়নকে এগিয়ে নিতে এবং সামাজিক ন্যায্যতা প্রতিষ্ঠার জন্য নারীকে এ অধিকার দিতে হবে। সেজন্য প্রয়োজনে নতুন আইন প্রণয়ন করতে হবে।
নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের জন্য নির্বাচন কমিশনের বিধি অনুযায়ী রাজনৈতিক দলসমূহের নীতি নির্ধারণী পর্যায়ে ৩৩ শতাংশ নারীর অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করার উদ্যোগ নিতে হবে। পাশাপাশি জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত আসন সংখ্যা বাড়িয়ে ১০০ করা ও এসব আসনে সরাসরি নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে। সরাসরি নির্বাচনের মাধ্যমে জাতীয় সংসদে এলে নারী সংসদ সদস্যদের জন সম্পৃক্ততা বাড়বে। এতে রাজনৈতিক অঙ্গীকার ও জনগণের প্রতি জবাবদিহিতার মানসিকতা তৈরি হবে। উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে স্থানীয় সরকারে নির্বাচিত নারী প্রতিনিধিদের কার্যক্রমের পথে দেখা দেওয়া বাধাগুলো অপসারণেও।
দক্ষিণ এশিয়াতে নারীর ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রে পরীক্ষামূলকভাবে তিনটি দৃষ্টিভঙ্গিকে প্রাধান্য দেয়া হচ্ছে। যথা: সমন্বিত উন্নয়ন, অর্থনৈতিক উন্নয়ন, ও সচেতনতা বৃদ্ধি। সমন্বিত উন্নয়ন তত্ত্বের মূল দর্শন হলো, পরিবার ও সামাজিক সমাজের উন্নয়নের চাবিকাঠি হলো নারী উন্নয়ন।
অর্থনৈতিক উন্নয়ন তত্ত্বের মূল বক্তব্য হলো, যে বিষয়গুলো নারীর অধস্তনতা সৃষ্টি করে সে বিষয়গুলো সম্পর্কে তাদের সচেতন করে তুলতে হবে।
ডেভেলপমেন্ট অল্টারনেটিভ উইথ উইমেন ফর নিউ ইরা -(ডি এ ডব্লিউ এন) নারীর ক্ষমতায়নের সংজ্ঞা ব্যখ্যা করতে গিয়ে বলেছে -‘এর মূল লক্ষ্য হচ্ছে জেন্ডার বৈষম্য বিহীন এক পৃথিবী গড়ে তোলা। যে পৃথিবীতে ক্ষমতায়নের মাধ্যমে নারী তার নিজের জীবনের পরিবর্তন আনতে সক্ষম।’
নারীর ক্ষমতায়নের মূল লক্ষ হচ্ছে -ক্ষমতার উৎস ও কাঠামোর পরিবর্তন। নাজমা চৌধুরী ‘নারীর ক্ষমতায়ন : রাজনীতি ও নারী ’ শীর্ষক প্রবন্ধে যে লক্ষ্যগুলির বর্ণনা করেন তাহলো- নারীর সুপ্ত প্রতিভা এবং সম্ভাবনার পূর্ণ বিকাশের সুযোগ, নারীর জীবনের ওপর প্রভাব বিস্তারকারী সিদ্ধান্ত সমূহে অংশগ্রহণের সুযোগ নিজের জীবন সম্পর্কিত সিদ্ধান্ত গ্রহণের পরিমন্ডল, পরিধি ও সম্ভাবনার বিস্তার।
সমাজের প্রচলিত বিশ্বাস, মূল্যবোধ , দৃষ্টিভঙ্গি, ঐতিহ্যকে বিবেচনায় না এনে কোন প্রক্রিয়াতেই নারীর ক্ষমতায়ন সম্ভব নয়। সংস্কার বা পরিবর্তন হঠাৎ করে জোর করে চাপিয়ে দেয়ার বিষয় নয়। আধিপত্যশীল সংস্কৃতির বিদ্যমান অবস্থার সাথে সংঘর্ষ বাধিয়ে নতুন করে সমস্যা বাড়াবে। তাই ধীরে ধীরে কৌশলে অত্যন্ত সূক্ষ্মভাবে, দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা নিয়ে এগুতে হবে। যাতে কারো প্রতি সুবিচার করতে যেয়ে কারও প্রতি অবিচার না হয়ে পড়ে। নিজস্ব স্বকীয়তা, সংস্কৃতি আত্মপরিচয় হুমকির মুখে না পড়ে। গভীরে প্রোথিত শিকড়ে টান না লাগে, মানসিকভাবে নতুন করে ভাবতে, চিন্তা করতে, মন-মানসকে প্রস্তুত করতে হবে। এজন্য মানসিক পরিবর্তন ও চিন্তা, দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন প্রয়োজন হবে। যা হঠাৎ হয়ে যাবে না। সরকারী বেসরকারি কর্মকান্ডের মাধ্যমে ব্যক্তিগত বা সামষ্টিক মানবিক কর্মকান্ডের মাধ্যমে বৃহত্তর জনমানুষের বিশ্বাস ও মূল্যবোধের সাথে সমন্বয় করে এগিয়ে যেতে হবে।
নারীর ক্ষমতায়ন প্রসঙ্গে চিন্তাশীল মানুষকে আরও সজাগ হতে হবে। সর্বস্তরে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। নারী সমাজের জীবনের বাস্তব দিকগুলো গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করা এবং তার অবস্থান কোথায় বা কোথায় থাকা উচিত তা উপলব্ধি করতে পারাটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিশ্বায়নের যুগে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির প্রভূত উন্নতির পরও আমাদের সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গির ইতিবাচক পরিবর্তন না হওয়াটা দুঃখজনক। সহিংসতা সম্বন্ধে সমাজে সচেতনতার এই অভাব পূরণে সম্মিলিত প্রয়াস চালাতে হবে।
নারীর প্রতি সহিংস আচরণ সমাজে বৃদ্ধি পাচ্ছে রাজনৈতিক সহিংসতা ছাড়াও সামাজিক সহিংসতা যথেষ্ট পরিমাণে বেড়েছে যা মানুষকে আতঙ্কিত করে তুলছে। মানব সমাজ জ্ঞান ও প্রযুক্তির দিক দিয়ে যতটা সভ্যই হোক না কেন মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি কোনো কোনো ক্ষেত্রে নিতান্তই সংকীর্ণ হয়ে পড়েছে।
নারীর সহিংসতা, নির্যাতন, নিপীড়ন, বঞ্চনা বৈষম্য এগুলো মোটেই কাম্য নয়। আর অযৌক্তিক আচরণ দূর হোক- এ প্রত্যাশা আমাদের। সত্যিকারার্থে নারীকে যথার্থ মূল্যায়ন না করে সুন্দর শান্তিময় সমাজ গঠনে কার্যকর ভূমিকা আশা করাটাও ঠিক হবে না। নারীর ক্ষমতায়নকে গুরুত্বের সাথে দেখা দরকার, এক্ষেত্রে বাড়াবাড়ি না করে যৌক্তিক পন্থায় সবাই এগিয়ে আসুক এটাই আহ্বান।
কিন্তু এসব কিছুর পরও হাটি- হাটি- পা -পা করে নারীরা এগিয়েছে অনেক দূর। নানা বাধার পাহাড় ডিঙ্গিয়ে বাঙালি নারীরা এখন অগ্রদূত। শত প্রতিকূলতায়ও নানা ক্ষেত্রে কৃতিত্বপূর্ণ অবদান রেখে তারাই এখন রোল মডেল। যে কয়েকটি ক্ষেত্রে বাংলাদেশ বিশেষভাবে সামনে এগিয়ে গেছে বলে বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত হয়েছে , যেমন সামাজিক উন্নয়ন, ধারাবাহিক অর্থনৈতিক গতিশীলতা, আন্তর্জাতিক মন্দার ধাক্কা সামলানো, জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ, ক্ষুদ্র ঋণ ব্যবহার, তৃণমূল পর্যায়ের ক্ষমতায়ন, ভোটার হিসেবে সবচেয়ে বেশি অংশগ্রহণ, পোশাক রফতানিতে প্রথম সারিতে স্থান লাভ, ইত্যাদি সবকটির পেছনেই নারীর অবদান উল্লেখযোগ্য।
রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের দিক থেকে দেখলে বলা যায়, স্বাধীনতার পর থেকে নারীরা এক্ষেত্রে ক্রমাগত যে সাফল্য অর্জন করেছে, সরকারের বর্তমান মেয়াদে তা সর্বাপেক্ষা বেশি। ১৯৮৬ সালের সাধারণ নির্বাচনে সরাসরি ভোটে মাত্র ৫ জন নারী সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। পরে ১৯৯১-এর নির্বাচনে ৪ জন, ১৯৯৬-এর নির্বাচনে ১১ জন ও ২০০১-এর নির্বাচনে ৬ জন নারীর বিজয়ের রেকর্ডকে টপকিয়ে ২০০৮-এর নির্বাচনে ১৯ জন নারী সরাসরি নির্বাচিত হয়ে জাতীয় সংসদে প্রতিনিধিত্ব করছেন। এদিকে সংবিধানের সর্বশেষ সংশোধনীতে ২০১১ সালে সংরক্ষিত আসনের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫০-এ। সব মিলিয়ে চলতি সংসদে সর্বমোট ৬৯ জন নারী সংসদ সদস্য হিসেবে জাতীয় সংসদে নারীসমাজের প্রতিনিধিত্ব করছেন। বর্তমান সরকারের প্রধানমন্ত্রী এবং সংসদের বিরোধী দলীয় নেত্রী ও সংসদ উপনেতার প্রত্যেকেই নারী। হুইপ এবং সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান ও সদস্য হিসেবেও কাজ করছেন তাঁরা। এছাড়া বর্তমান সরকারের মন্ত্রিসভায় এ মূহুর্তে পররাষ্ট্র, কৃষি, ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের পূর্ণমন্ত্রী এবং মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বও পালন করছেন তাঁরা।
নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নারী ভোটারের সংখ্যা ছিল ৪ কোটি ১২ লাখ ৩৬ হাজার, যা পুরুষ ভোটারের চেয়েও প্রায় ১৫ লাখ বেশি। সরকারি-বেসরকারি তৎপরতায় তৃণমূলসহ সকল পর্যায়ে রাজনৈতিক সচেতনতা বাড়ায় নারীরা ভোটার হিসেবে অংশ নিয়েছিল অন্য যেকোনো নির্বাচনের চেয়ে বেশি। অর্থাৎ এই নির্বাচনে নারীরাই প্রার্থীদের জয়-পরাজয়ের গুরুত্বপূর্ণ নিয়ামক হিসেবে ভূমিকা রেখেছে বলে বিশেষজ্ঞরা অভিমত দিয়েছেন।
স্থানীয় সরকার,
বিশেষ করে ইউনিয়ন পরিষদ ও উপজেলা পরিষদে নির্বাচিত প্রতিনিধি হিসেবে নারীর ব্যাপকহারে অংশগ্রহণ পৃথিবীর মধ্যে নজিরবিহীন। সর্বশেষ ২০০৩
সালের পর বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে দেশের চার হাজার ৫০৪টি
ইউনিয়নে সংরক্ষিত কোটায় সরাসরি নির্বাচনে অংশ নিয়ে ১৩
হাজার ৫১২ জন নারী সদস্য স্থানীয় পর্যায়ে
প্রতিনিধিত্ব করছেন। এর পাশাপাশি ২৩২ জন নারী চেয়ারম্যান নির্বাচন করেছেন
এবং জয়ী হয়েছেন ২২ জন। সারা দেশে ৪৮২টি উপজেলার মধ্যে ৪৮১টির নির্বাচন
সম্পন্ন হয়েছে ২০০৯ সালের ২২ জানুয়ারি। এর মধ্যে সংরক্ষিত কোটায় ৪৮১ জন ভাইস চেয়ারম্যান ছাড়াও সরাসরি
নির্বাচনে তিনজন নারী উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে
প্রতিনিধিত্ব করছেন। কাজ করছেন প্রত্যক্ষ ভোটে
নির্বাচিত পৌর কাউন্সিলর নারীরাও। নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন
নির্বাচনে প্রভাবশালী পুরুষ প্রার্থীকে হারিয়ে মেয়র নির্বাচিত হবার গৌরবজনক স্থানটিও দখল করে নিয়েছেন একজন নারী।
পরিসংখ্যান অনুযায়ী বর্তমানে সচিবালয়ে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগে কর্মরত ৮ হাজার ৬০০ জন কর্মকর্তার মধ্যে এক হাজার ২৪৬ জন নারী। সচিব ও সমমানের ৬৯ জন কর্মকর্তার মধ্যে নারী ৪ জন। ১৫৭ জন অতিরিক্ত সচিবের মধ্যে নারী ৯ জন এবং ৪২৯ জন যুগ্ম সচিবের মধ্যে নারী ২৭ জন। সব মিলিয়ে প্রশাসনে নারীর অংশগ্রহণ ১৫ শতাংশ। জেলা প্রশাসক এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পদে স্থানীয় প্রশাসনের প্রধান হিসেবে নারীরা সাফল্যের সাথে দায়িত্ব পালন করে চলেছেন। মাত্র ১৪ জন সদস্য নিয়ে ১৯৭৪ যাত্রা শুরু করা বাংলাদেশ পুলিশের অনেক গুরুত্বপূর্ণ পদে এখন নারীরা অধিষ্ঠিত হয়েছেন। ২০০৯ সালের হিসেবে পুলিশ বাহিনীর সদস্য সংখ্যা ছিল ১ হাজার ৯৩৭ জন; যাদের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ পদেও (একজন ডিআইজি, ৪ জন অতিরিক্ত ডিআইজি, অতিরিক্ত এসপি ১৯ জন, সিনিয়র এএসপি ১০ জন, এএসপি ৭৭ জন, ইন্সপেক্টর ৫৩ জন, এসআই ১৮৯ জন, এএসআই ও হেড-কনস্টেবল ২৫৩ জন) অনেকে অধিষ্ঠিত হয়েছেন। ২০১১ সাল থেকে ৩৭১ জন সদস্য নিয়ে যাত্রা শুরু করেছে নতুন একটি নারী ইউনিট। একজন অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের নেতৃত্বে ১১ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের এই ইউনিটটি ৭০০-র অধিক সদস্য নিয়ে পূর্ণাঙ্গ ব্যাটালিয়ন হবার দিকে যাত্রা শুরু করেছে। ইতোমধ্যে চালু হয়েছে ‘উইমেন পুলিশ নেটওয়ার্ক’। এছাড়া জাতিসংঘ শান্তি মিশন, র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন, স্পেশাল ব্রাঞ্চের ট্রেনিং স্কুল এবং থানার ওসি হিসেবেও সাফল্যের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছেন ও করছেন আমাদের নারীরা। নারীরা আজ সাফল্যের সাথে কাজ করে চলেছেন সেনা, বিমান ও নৌবাহিনীতেও, যাঁদের অনেকে গুরুত্বপূর্ণ কমান্ডিং অফিসারের দায়িত্বে নিয়োজিত।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর সর্বশেষ জরিপ অনুযায়ী দেশের ৫ কোটি ৪১ লাখ কর্মজীবীর মধ্যে এক কোটি ৬২ লাখ নারী। ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প উদ্যোক্তাদের মধ্যে নারীর সংখ্যা ১৬ হাজার ৬ শত ৯৭ জন। বিদেশে বিভিন্ন পেশায় কর্মরত ৭৬ লাখ প্রবাসীর মধ্যে ৮২ হাজার ৫৫৮ জন নারী। এছাড়া বৈদেশিক মুদ্র্রা অর্জনের প্রধানতম ক্ষেত্র গার্মেন্টস খাতের ৮০ ভাগ কর্মীই নারী। দেশের ৯০ শতাংশ ক্ষুদ্র ঋণ ব্যবহারকারীও নারী। অর্থনীতিবিদ ড. আবুল বারাকাতের এক গবেষণায় জানা যায়, নারী বিনা পারিশ্রমিক ও কম পারিশ্রমিকে যে পরিমাণ শ্রমদান করে, তা টাকার অংকে জিডিপির শতকরা ৪৮ ভাগ। এই চিত্র নারীর অর্থনৈতিক অবদানের ব্যাপ্তিটা সামনে হাজির করে, যার মাধ্যমে জাতীয় আয়ে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছে আজ আমাদের নারীসমাজ।
আপিল বিভাগ ও হাইকোর্ট বিভাগের বিচারক হিসেবেও নারীরা সাফল্যের স্বাক্ষর রেখে চলেছেন। বিভিন্ন দেশে রাষ্ট্রদূত হিসেবে কাজ করছেন অনেকে।
বর্তমান সরকারের মেয়াদে গঠিত তথ্য কমিশনে কমিশনার হিসেবে কাজ করছেন একজন নারী। জেলা তথ্য বাতায়ন এবং জাতীয় ই-তথ্যকোষ বর্তমান সরকারের এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ। ই-তথ্যকোষ তথ্যপ্রযুক্তির সাথে পরিচিত নারীর হাতে তার জীবন ও কর্মের সাথে সংশ্লিষ্ট প্রায় সব ধরনের তথ্য (কৃষি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, আইন ও মানবাধিকার, নাগরিক সেবা, পর্যটন, অকৃষি উদ্যোগ, পরিবেশ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, বিজ্ঞান এবং তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি, শিল্প ও বাণিজ্য, সাহিত্য ও সংস্কৃতি এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান) পৌঁছে দিয়েছে, যা তাদের ক্ষমতায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছে। সাংবাদিকতার মতো পেশায় সাম্প্রতিক সময়ে নারীদের অংশগ্রহণ উল্লেযোগ্য পরিমাণে বেড়েছে। এটা ঠিক যে, মুদ্রণ ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে নারী অংশগ্রহণ এখনো প্রায় নেই বললেই চলে। তবু নারীদের এই খাতে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে অংশগ্রহণ তাদের সমস্যা, সম্ভাবনা ও অর্জনকে গণমাধ্যমে হাজির করার ক্ষেত্রে অনুকূলতা দিয়েছে।
নারী বান্ধব বিভিন্ন আইনঃ
মহান সংবিধানে জীবনের সবক্ষেত্রে নারীর সমানাধিকার স্বীকৃত হবার পর ক্রমান্বয়েই নারী দৃঢ়ভাবে সামনে এগিয়ে গিয়েছে। ১৯৭৪ সালে জাতিসংঘ কর্তৃক ‘নারীবর্ষ’ ঘোষিত হলে সে অনুযায়ী বাংলাদেশ বিভিন্ন কার্যক্রম নিয়ে সক্রিয় হয়। ১৯৭৫ সালের জুলাই মাসে মেক্সিকোতে অনুষ্ঠিত প্রথম বিশ্ব নারী সম্মেলনে ১৯৭৬-১৯৮৫ মেয়াদের ১০ বছরকে ‘নারী দশক’ হিসেবে ঘোষণার প্রেক্ষাপটে নারী অধিকারের বিষয়গুলো উন্নয়নের কেন্দ্রবিন্দুতে চলে আসে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশে দেশের সর্বস্তরের নারীদের সার্বিক উন্নয়ন ও অবস্থা পরিবর্তনের লক্ষ্যে একটি মহিলা সংস্থার রূপরেখা প্রণীত হয়। ১৯৯১ সালে যা জাতীয় মহিলা সংস্থা একটি সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানে রূপ নেয়। এই সংস্থা সরকারের পক্ষ থেকে নিয়মিত যেসব কার্যক্রম বাস্তবায়ন করে আসছে, তা অধিকার সচেতন করার পাশাপাশি নারীদের উন্নয়নে বিশেষ ভূমিকা রেখেছে। নারীদের কল্যাণে আলাদাভাবে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় গঠন, জাতীয় সংসদে নারীর জন্য আসন সংরক্ষণও নারীর ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। নারীর সুরক্ষা ও অগ্রগতির জন্য ক্রমশ প্রণীত হয়েছে মুসলিম বিবাহ ও তালাক (রেজিস্ট্রিকরণ) আইন, যৌতুক নিষিদ্ধকরণ আইন, নারী নির্যাতন (নিবর্তন) আইন, প্রাথমিক শিক্ষা (বাধ্যতামূলককরণ) আইন, পারিবারিক আদালত অধ্যাদেশ, পারিবারিক আদালত বিধিমালা, এসিড অপরাধ দমন আইন, স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ) আইন, স্থানীয় সরকার (উপজেলা পরিষদ) আইন, স্থানীয় সরকার (পৌরসভা) আইন, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন (সংশোধন) আইন, জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন আইন, জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন আইন, মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমন আইন, পারিবারিক সহিংসতা (প্রতিরোধ ও সুরক্ষা) আইন প্রভৃতি। নারীর অনুকূলে আইন-বিধি ও নীতিমালার মধ্যে সিডও সনদের ভিত্তিতে ১৯৯৭ সালে প্রণীত নারী উন্নয়ন নীতি একটি গুরুত্বপূর্ণ ও প্রণিধানযোগ্য পদক্ষেপ, ২০০৪-এ রাজনৈতিকভাবে নেতিবাচক পরিবর্তন সাধিত হলেও পরে ২০১১-এ এসে যা পুনরায় চূড়ান্তভাবে গৃহীত হয়েছে। এই নারী উন্নয়ন নীতিই স্থানীয় সরকারের সংরক্ষিত আসনে নারীদের সরাসরি ভোটে নির্বাচিত হবার সুযোগ উন্মুক্ত করে দিয়েছে; যা তৃণমূল পর্যায়ের নারীদের ক্ষমতায়নে বৈপ্লবিক পরিবর্তন ঘটিয়েছে। এছাড়া নির্বাচন কমিশনার নিয়োগবিধির খসড়ায় একজন সিইসি ও দুজন কমিশনারের একজন নারী নিয়োগের বিধান রাখা, রাজনৈতিক দলগুলোর নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে ৩৩ শতাংশ নারীর অংশগ্রহণ বাধ্যতামূলক করে করা নির্বাচন কমিশনের বিধান, সন্তানের পরিচয়ে বাবার নামের পাশে মায়ের নাম বাধ্যতামূলক করা, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগে ৬০ শতাংশ নারী নিয়োগের বিধান প্রভৃতি সিদ্ধান্তও নারীর ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।
নারীর ক্ষমতায়ন হলো নারীর স্বনির্ভরতা অর্জন এবং সমাজে-পরিবারে-রাষ্ট্রে সিদ্ধান্ত গ্রহণের অধিকার অর্জন। নারীর ক্ষমতায়নকে উপলক্ষ করে সাম্প্রতিক যে সকল ইতবাচক পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে, তা হলো-
* সিডও সনদ বাস্তবায়নের লক্ষে জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতি ২০০৮ প্রণয়ন।
* জেলা, উপজেলা এবং ইউনিয়ন পরিষদ পর্যায়ে নারীর জন্য সরাসরি ভোটে ভাইস চেয়ারম্যানের পদটি সংরক্ষণ করা।
* নির্বাচন কমিশনার নিয়োগবিধির খসড়াতে একজন সিইসি ও দুজন কমিশনারের একজনকে অবশ্যই নারী নিয়োগের বিধান রাখা
* নির্বাচন কমিশনার কর্তৃক রাজনৈতিক দলগুলোর নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে ৩৩ শতাংশ নারীর অংশগ্রহণ রাখার বিধান জারি।
১৯৭৪ সালে মুসলিম বিবাহ ও তালাক (রেজিস্ট্রিকরণ) আইন এবং ১৯৮০ সালে যৌতুক নিরোধ আইন প্রবর্তন করা হয়, যা নারীর ক্ষমতায়নে বিশেষভাবে সহায়ক হয়। ১৯৮৩ সালে প্রবর্তিত নারী নির্যাতন (নিবর্তন শাস্তি) অধ্যাদেশ নারীর প্রতি সহিংসতা রোধের ক্ষেত্রের ভূমিকা রাখে। নারীর প্রতি সুবিচার প্রতিষ্ঠার লক্ষে ১৯৮৫ সালে জারি করা হয় পারিবারিক আদালত অধ্যাদেশ। ২০০০ সালে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন চালু হয়।
উন্নয়নের সঙ্গে জেন্ডার-ধারণাকে যুক্ত করার বিষয়টি অবশ্য আরো গতি পায় ১৯৯৫ সালের জাতিসংঘস্ত্রণীত মানব উন্নয়ন রিপোর্টটি প্রকাশের পরে। এই রিপোর্টে মানবসমাজের অংশ রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের অপরিহার্য পক্ষ হিসেবে নারীকে বিবেচনা করা হয়। বাংলাদেশের সংবিধানে (অনুচ্ছেদ ২৮, ২৯, ৬৬ ও ১২২) অবশ্য আগেই নারী-পুরুষের সমানাধিকারের কথা বলা হয়েছে। সরকারি কর্মকান্ডে নারীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার জন্য জাতীয় সংসদের ১৫টি আসন নারীর জন্য সংরক্ষিত রাখা হয়।
২০০০ সালে ‘সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্য’ নির্ধারণ করে যে আটটি লক্ষ্যমাত্রা গ্রহণ করা হয় তার তৃতীয়টি হলো প্রমোট জেন্ডার ইকুয়ালিটি অ্যান্ড এমপাওয়ারমেন্ট। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশে নারী-পুরুষের বৈষম্য নিরসনের আনুষ্ঠানিক লক্ষ্যে জাতীয় নারী উন্নয়ন পরিকল্পনা, পঞ্চম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা, জাতীয় নারী নীতি -১৯৯৭ প্রণয়ন করা হয়।
মহিলা ও শিশু
বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীন বাস্তবায়িত বিভিন্ন প্রকল্প সমূহঃ
১. মহিলা ও শিশু ডায়াবেটিক, এন্ডোক্রিন মেটাবলিক হাসপাতাল - এই প্রকল্পের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হচ্ছে ১০০ শয্যাবিশিষ্ট মহিলা ও শিশু ডায়াবেটিস, এন্ডোক্রিন ও মেটাবলিক হাসপাতাল স্থাপনের মাধ্যমে মহিলা ও শিশু রোগীদের চিকিৎসা সেবা প্রদান।
২. নারী ও পুরুষের মধ্যে সমতার উন্নয়ন ও নারীর ক্ষমতায়ন প্রকল্প এই প্রকল্পের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হচ্ছে নারী ও মেয়ে শিশুরা যাতে প্রজনন স্বাস্থ্য ও অধিকার বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারে, সে জন্য নারীর ক্ষমতায়ন, নারী ও মেয়ে শিশুর প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ দূর করা ও নারী-পুরুষ সমতার দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে তোলার মাধ্যমে সামাজিক পরিবর্তনের সূচনা করা।
৩. Vulnerable Group Development for Ultra-Poor Project (VGDUP) - এই প্রকল্পের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হচ্ছে দুঃস্থ মহিলারা যাতে আত্মকর্মসংস্থানমূলক ও আয়বর্ধক কর্মকান্ডে নিয়োজিত হতে পারে এ লক্ষ্যে তাদের প্রশিক্ষণ ছাড়াও নগদ ভাতা প্রদান, সম্পদ সরবরাহ, ও সঞ্চয় বৃদ্বিতে সহায়তা করা (Subsistence allowance, IGA Training, Productive Asset)
৪. নারী নির্যাতন প্রতিরোধে ৫টি বিভাগীয় শহরে ভৌত সুবিধাদি সৃষ্টিকরণ - এই প্রকল্পের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হচ্ছে নারীর বিরুদ্ধে সহিংসতা প্রতিরোধের লক্ষ্যে ৫ টি বিভাগীয় শহরে চলমান মহিলা সহায়তা কর্মসূচীর জন্য অফিস কাম সেলটার হোম ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র নির্মাণ। আশ্রয়হীন এবং অসহায় মহিলাদের নিরাপদ আশ্রয়ে থাকার ব্যবস্থা করা এবং তাঁদের মৌলিক চাহিদা পূরণের ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
৫. নিম্নবিত্ত এবং মধ্যবিত্ত শ্রেণির কর্মজীবী মায়েদের শিশুদের জন্য দিবাযতœ কর্মসূচী প্রকল্প - এই প্রকল্পের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হচ্ছে নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির কর্মজীবী মহিলাদের ছোট শিশুদের (৬ মাস থেকে ৬ বছর বয়স) নিরাপদ দিবাকালীন সেবা প্রদান করার জন্য ঢাকা মেট্রোপলিটন সিটিতে ১০টি ডে-কেয়ার কেন্দ্র স্থাপন করা।
৬. জেলা ভিত্তিক মহিলা কম্পিউটার প্রশিক্ষণ (২য় পর্যায়) প্রকল্প - এই প্রকল্পের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হচ্ছে শিক্ষিত বেকার মহিলাদের আত্ম-কর্মসংস্থানের মাধ্যমে স্বনির্ভরতা অর্জনের ব্যাপারে উদ্বুদ্ধ করা। নারী সমাজকে মানব সম্পদে পরিনত করার লক্ষ্যে ধ্যান-ধারণাগত পরিবর্তনে উৎসাহ যোগানো এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি শিক্ষাদান।
৭. ‘নগরভিত্তিক প্রান্তিক মহিলা উন্নয়ন’ প্রকল্প - এই প্রকল্পের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হচ্ছে আয় বর্ধনমূলক ক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিভিন্ন ট্রেডে ২৭৬০০ নিম্ন আয় সম্পন্ন গরীব ও সুবিধাবঞ্চিত মহিলাদের প্রশিক্ষণ প্রদান করা। ৬টি বিভাগে ৪৬টি দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন। প্রশিক্ষিত মহিলাদের তৈরী পণ্য বাজারজাত করণের আউটলেট তৈরী করা।
৮. শিশুর বিকাশে প্রারম্ভিক শিক্ষা (ইএলসিডি) প্রকল্প - এই প্রকল্পের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হচ্ছে ০-৫ বছর বয়সী শিশুদের পারস্পরিক যতœ এবং শিশু বিকাশের অনুকূল নিরাপদ পরিবেশে প্রাক- শিক্ষা কেন্দ্র, বাড়িতে ও কমিউনিটিতে প্রাক-শিক্ষা কার্যক্রমে শিশুদের অংশ গ্রহণ এবং তাদের বুদ্ধি বৃত্তি, সামাজিক, ভাষাগত ও আবেগিক বিকাশ এবং প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়াশুনা করার উপযোগী করে গড়ে তোলা । প্রকল্পের আওতায় Early Learning Development Standards (ELDS) Ges Early Childhood Development এর খসড়া প্রণয়ন করা হয়েছে। শীঘ্রই চড়ষরপু ঋৎধসব ড়িৎশ চূড়ান্ত অনুমোদন করা হবে।
৯. সিসিমপুর আউটরীচ প্রকল্প - এই প্রকল্পের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হচ্ছে শিশুদের প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা প্রদান এবং সিসিমপুর নাটকের মাধ্যমে সচেতনতা বৃদ্ধি করা। প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা বিষয়ে বিলবোর্ড প্রদর্শন। প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা বিষয়ে গণসচেতনতা সৃষ্টির জন্য রেডিও, টিভি-তে প্রচারনা। প্রাক-প্রাথমিক পর্যায়ে শিক্ষকদের শিশুদের বিকাশ বিষয়ে প্রশিক্ষণ। প্রাক-প্রাথমিক শিশুর বিভিন্ন উপকরণ প্রস্তুত ও বিতরণ। প্রাক-প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সিসিমপুর নাটক প্রদর্শন। শিশুর অভিভাবককে শিশুদের লালন-পালন বিষয়ে প্রশিক্ষণ।
১০. বাংলাদেশ শিশু একাডেমীর ৬টি জেলা কমপ্লেক্স ভবন নির্মান প্রকল্প - এই প্রকল্পের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হচ্ছে বাংলাদেশ শিশু একাডেমীর ৬টি জেলার নিজস্ব জমিতে সাংগঠনিক ও প্রশাসনিক অবকাঠামো স্থাপন। শিশুর মেধা ও মনন বিকাশে সাংস্কৃতিক পরিমন্ডলে দেশি ও আন্তর্জাতিক সংযোগ স্থাপনে জেলার সিভিক পয়েন্ট হিসাবে সরকারি-বেসরকারি সংস্থা ও এনজিও, দেশি ও বিদেশি প্রতিষ্ঠানসমূহের কেন্দ্রবিন্দু হিসাবে কাজ করবে। প্রশিক্ষণ, লাইব্রেরী ও মিউজিয়াম স্থাপনের মাধ্যমে জেলায় শিশুর মেধা-মনন বিকাশের মাধ্যম হিসাবে জেলাসমূহে কার্যক্রম বিস্তৃত করা।
১১. পলিসি লিডারশিপ এ্যান্ড এ্যাডভোকেসী ফর জেন্ডার ইকুয়্যালিটি-২ প্রকল্প। এই প্রকল্পের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হচ্ছে দারিদ্র বিমোচন ও টেকসই উন্নয়নে বাংলাদেশ সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থাসমূহকে সহায়তা প্রদান করা। বিশেষ করে নারীর সার্বিক অধিকার প্রতিষ্ঠা, জেন্ডার সমতাকরণ, ক্ষমতায়ন ও সামগ্রিক উন্নয়নে সহায়তা প্রদান করা।
১২. ক্যাপাসিটি বিল্ডিং ফর মনিটরিং চাইল্ড রাইটস -এই প্রকল্পের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হচ্ছে শিশু সংক্রান্ত নীতির বিশ্লেষণ, কার্যকরী সমন্বয়, ঈজঈ রিপোর্টিং ও ঈজঈ অনুযায়ী শিশু অধিকার প্রতিষ্ঠার বিষয়াদি পরিবীক্ষণের লক্ষ্যে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো শক্তিশালীকরণ।
১৩. এমপাওয়ারমেন্ট এ্যান্ড প্রটেকশন অব চিলড্রেন (ইপিসি) - এই প্রকল্পের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হচ্ছে শিশুদের যৌন নির্যাতন, হয়রানী ও জেন্ডার বৈষম্যসহ সকল প্রকার নির্যাতন প্রতিরোধ এবং যৌন নিপীড়ন হতে নারী ও শিশুকে রক্ষা করার জন্য কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহন করা । কিশোরী মেয়েদের সমসঙ্গী পদ্ধতিতে শিক্ষাদান এবং জীবন দক্ষতা ও জীবিকা অর্জনের জন্য প্রশিক্ষণ প্রদান।
১৪. নারী নির্যাতন প্রতিরোধকল্পে মাল্টিসেক্টরাল প্রকল্প (২য় পর্ব) -এই প্রকল্পের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হচ্ছে ওয়ানস্টপ ক্রাইসিস সেন্টার (ওসিসি)’র মাধ্যমে শারীরিক নির্যাতন, যৌন নির্যাতন ও দগ্ধ মহিলাদের স্বাস্থ্যসেবা, পুলিশি সহায়তা, ডিএনএ পরীক্ষা, মানসিক কাউন্সেলিং এবং আশ্রয়সেবাসমূহ প্রদান করা হয়। দেশব্যাপি নির্যাতিতাদের সহায়তা করার জন্য পাঁচটি বিভাগীয় মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে বিভিন্ন সমস্যা যেমন পিতৃত্ব অথবা মাতৃত্বের প্রমাণ, বিদেশে অধিবাসী হতে ইচ্ছুকদের প্রয়োজনীয় ডিএনএ পরীক্ষা অথবা বংশের ধারা প্রমাণ এবং বিভিন্ন দুর্যোগ ও দূর্ঘটনায় নিখোঁজ, মৃত মানুষের পরিচিতি উদ্ধার।
১৫. প্রমোশন অব লিগ্যাল এন্ড সোসাল এম্পাওয়ারমেন্ট অব উমেন ইন বাংলাদেশ (২য় পর্ব)-এই প্রকল্পের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হচ্ছে ন্যায় বিচার ব্যবস্থায় মহিলাদের অধিকতর প্রবেশাধিকার সৃষ্টির লক্ষ্যে আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক পর্যায়ে জাতীয় এবং স্থানীয় প্রতিষ্ঠানসমূহের সক্ষমতা বৃদ্ধি করা। সক্ষমতা বৃদ্ধি ও সংলাপের মাধ্যমে ন্যায় বিচার প্রাপ্তিতে নারীর প্রবেশাধিকার সৃষ্টি। নির্যাতন ও অপরাধ এর বিরুদ্ধে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা হিসেবে নারীর প্রতি সংবেদনশীল কমিউনিটি ভিত্তিক পুলিশী কার্যক্রম বাস্তবায়ন।
সম অধিকার, সম সুযোগঃ সবার জন্যই উন্নয়ন" উন্নয়নের জন্য নারীর ক্ষমতায়নঃ
আন্তজার্তিক নারী দিবস। সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে
নারীর অবদানকে তুলে ধরার প্রয়াসেই এই উদযাপন।
প্রারম্ভিক অবস্থায় সামাজিক ও রাজনৈতিক
ক্ষেত্রে নারীর অবস্থান প্রতিষ্ঠিত করার লক্ষ্যে দিনটি
পালন করা হলেও সমকালীন বিশ্বে নারীর সংগ্রামকে সামাজিক ও রাজনৈতিক ভাবে তুলে ধরাই দিবসটির মূল লক্ষ্য।
প্রায় এক শতক যাবত দিবসটি বিশেষ নির্দেশনা
নিয়ে পালিত হয়ে আসছে সারা
বিশ্বব্যাপী। বিশ্ব জুড়ে অস্থিরতার
শিকার নারীকে সামাজিক ও রাজনৈতিক ভাবে মূল্যায়নের
প্রেক্ষাপটেই দিবসটির অবস্থান। বিশ্বের অনেক দেশে দিবসটিকে অফিসিয়াল ছুটির দিন হিসাবে পালন করা হয় যেমন, অ্যাঙ্গোলা,
আর্মেনিয়া, আজারবাইজান, কম্বোডিয়া,
চীন, কিউবা, জর্জিয়া,
কাজাকিস্তান, লাওস, মাদাগাস্কার,
মঙ্গোলিয়া, নেপাল, রাশিয়া,
সার্বিয়া, উগান্ডা, ইউক্রেন,
ভিয়েতনাম, জিম্বাবুয়ে সহ আরো
অনেক দেশে।
নারীর ক্ষমতায়ন সহ সু-অধিকার প্রাপ্তি নিশ্চিতকরণ
আজ মানব সভ্যতার জন্য
বিশাল চ্যালেন্জ। বিশ্বজুড়ে নারীর
উন্নয়নে যেসব অগ্রগতি অর্জিত হয়েছে বা হচ্ছে তারমধ্যে
নারীশিক্ষা, চাকুরীক্ষেত্রে সম অধিকার প্রাপ্তি, রাজনৈতিক অঙ্গনে অংশগ্রহন সহ
সমঅধিকারের জন্য আইনগত ভিত্তি উল্লেখ্যযোগ্য। কিন্তু উন্নত বিশ্বের তুলনায় উন্নয়নশীল বা উন্নয়নগামী বিশ্বে
এচিত্র কিছুটা ভিন্ন। সেখানে সবচেয়ে বড় ব্যর্থতার প্রতিফলন রয়ে গিয়েছে নারীর
ক্ষমতায়নে। প্রসবকালীন উচ্চ
মৃত্যুহার, পরিবারে সিদ্ধান্ত গ্রহন ও পরিকল্পনায় সুযোগহীনতা,
নারীর বিরুদ্ধে সহিংসতা, যৌন হয়রানী আজো এবিশ্বের জন্য এক লজ্জা। পৃথিবীব্যাপী নারীর বিরুদ্ধে যেসব সহিংসতা পরিলক্ষিত হয়, তারমধ্যে ভয়াবহ হচ্ছে ‘honor killing’, নারী পাচার ও যৌন হয়রানী। দারিদ্রতা ও বিভিন্ন বির্পযয়ের প্রথম শিকারও হয় নারী। সে প্রেক্ষাপটে
জাতিসংঘের মহাসচিব
তার আর্ন্তজাতিক নারী দিবসে প্রদত্ত বানীতে
নারীর বিরুদ্ধে সকল অসাম্যতা দূরকরণের জন্য “UNite to End Violence against
Women” নামক ক্যাম্পেইনের ঘোষনা দিয়েছেন।
উন্নয়নের
জন্য নারীর ক্ষমতায়নঃ প্রেক্ষিত বাংলাদেশ বাংলাদেশে নারীর সামাজিক ও রাজনৈতিক অবস্থান সাম্প্রতিক
কালে কিছুটা স্থিতিশীল হলেও সামাজের অন্ধকার কোনগুলোতে এখনো রয়েছে অনেক
অসাম্যতা। প্রতিদিন পত্রিকার কোন
না কোন পৃষ্ঠায় থাকে নারীর প্রতি অসাম্যতা, হয়রানি আর সহিংসতার খবর। এখনো প্রতিটি গৃহের নারীর কর্মকে অর্থনৈতিক কর্মকান্ড বলে রাষ্ট্রীয় ভাবে স্বীকৃত দেয়া হয়না। নারীর ভোটাধিকার
নিশ্চিত করা হলেও
ভোটদান সুনিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি দেশের
সবর্ত্র। হয়তো
প্রতিটি গ্রামেই এখনো
দেখা মিলে মজিদ-জমিলা চরিত্র।
সামগ্রিক ভাবে দেশের উন্নয়নে প্রতিটি মানুষেরই অবদান রয়েছে। প্রত্যেকের দক্ষতার যোগফলই রাষ্ট্রীয় অগ্রগতির মাপকাঠি। তাই রাষ্ট্রীয়
উন্নয়নের জন্য প্রথমেই বিবেচনা করতে হবে সুযোগ ও অধিকার বন্চিত অর্ধেক
জনসংখ্যা, নারীর উন্নয়নের। সামগ্রিক বিবেচনায়
নারীর ক্ষমতায়নের কোন বিকল্প এই মুহুর্ত্বে নেই। নারীর ক্ষমতায়নে যেসব
কার্যকরী ব্যাবস্থা নিশ্চিত করতে হবে-
১)
প্রাইমারী থেকে উচ্চ শিক্ষার প্রতিটি স্তরে নারীর সম অধিকার নিশ্চিতকরণের মাধ্যমে অংশগ্রহনে উদ্ধুদ্ধ করতে হবে। শিক্ষা গ্রহনের
প্রতিটি স্তরে নারীর ঝরে পরার হার কমানোর লক্ষ্যে প্রয়োজনে প্রতিটি
স্তরে ইনসেনটিভের ব্যবস্থা গ্রহন করতে হবে।
২)
শিক্ষা পরবর্তী নারীর কর্মসংস্থানের নিশ্চয়তা দিতে হবে। এটা শুধুমাত্র নারীই নয়,
দেশের প্রতিটি নাগরিকের এই অধিকারটি
নিশ্চিতকরণে সরকারকে আন্তরিক হতে হবে। দেশের রাজনৈতিক
অস্থিতিশীলতা লাঘব করে আর্ন্তজার্তিক বিনেয়োগকারীদের
বিনিয়োগে উৎসাহিত করতে হবে।
৩)
অফিস-আদালতে পুরুষের সাথে একত্রে কাজ করার অধিকার নিশ্চিতকরণের পাশাপাশি কাজের বিনিময়ে ন্যায্য ও সমান প্রতিদান (বেতন ও অন্যান্য
সুবিধাদি) পাবার
অধিকার নিশ্চিত করতে হবে।
৪) নারীর আত্ব-কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে নতুন নতুন বাজার সৃষ্টি
করতে হবে। নারীর জন্য স্বল্প
সুদে এবং বন্ধক বিহীন ঋণের ব্যবস্থা করতে হবে।
৫) নারীর সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। সেলক্ষ্যে আইনগত
প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি এসব প্রতিষ্ঠানকে রাষ্ট্রীয়
পৃষ্ঠপোষকতা প্রদান করতে
হবে।
৬)
নারীর গৃহকর্মকে রাষ্ট্রীয় ভাবে অর্থনৈতিক কর্মকান্ড হিসাবে স্বীকৃতি প্রদান করতে
হবে।
৭)
নারীর ভোটদানের অধিকার,
সম্পত্তি লাভের অধিকার, আইনগত চুক্তিতে অংশগ্রহণের অধিকার এবং
বিবাহ, অভিভাবক,
ও ধর্মীয়গত অধিকারের নিশ্চয়তা বিধান করতে হবে।
আর এইসব নিশ্চয়তার আলোকেই সম্ভব নারীর
ক্ষমতায়ন, সমঅধিকার প্রতিষ্ঠা এবং জাতীয় উন্নয়নের মূল স্রোতধারায় নারীর অংশগ্রহণ নিশ্চিতকরণ। আমরা রয়েছি সেদিনের প্রতিক্ষায়।
উপসংহারঃ
সমাজ বিজ্ঞানের একটি গুরুত্ব পূর্ণ বিষয় হল “বাংলাদেশে নারীর ক্ষমতায়নে বিদ্যামান সমস্যা ও সম্ভাবনা”।
উপরের আলোচনা হতে আমরা দেখতে পাচ্ছি যে, বাংলাদেশে নারীর ক্ষমতায়নে বিদ্যামান
সমস্যা ও সম্ভাবনা হলো জটিল সমস্যা, যার থেকে মুক্তি পাওয়া কঠিন ব্যাপার। তবে
সমস্যা গুলো সমাধানের লক্ষ্যে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। আর তাই সরকারি ও বেসরকারি খাতে নারীর ভূমিকা বিষয়টিকে জোড় দেয়। ১৯৮০-এর দশকে নারী ও উন্নয়ন এ দৃষ্টিভঙ্গিটি সমালোচনা করে জেন্ডার এবং উন্নয়ন’ ধারণার বিকাশ ঘটে। এই ধারা নারীর সামাজিক ও রাজনৈতিক জীবনের সব দিককে আলোকপাত
করার প্রচেষ্টা চালায়। জাতি, ধর্ম, শ্রেণি সকল ক্ষেত্রে সকলের সমতা, দারিদ্র্যতা থেকে পরিত্রাণ, নারীর ক্ষমতায়ন, নারীর সমতা, গৃহ অভ্যন্তর তথা রাষ্ট্রের উন্নয়নে অন্যতম সহায়ক হিসেবে নারীকে বিবেচনা করে। আর এইসব নিশ্চয়তার
আলোকেই সম্ভব নারীর ক্ষমতায়ন, সমঅধিকার
প্রতিষ্ঠা এবং জাতীয় উন্নয়নের মূল
স্রোতধারায় নারীর অংশগ্রহণ নিশ্চিতকরণ। আমরা রয়েছি সেদিনের প্রতিক্ষায়।
সুপারিশ মালাঃ
উপরোক্ত বিষয়ের
আলোকে নিম্নে সুপারিশ প্রদান করা হলোঃ
১। নারীকে
স্বাধীন মত প্রকাশের সুযোগ দান।
২। নারীর
অধিকার বাস্তবায়নের জন্য কঠোর আন্দলন করা।
৩। নারীকে তার
ক্ষমতা সঠিক ভাবে বুঝিয়ে দেয়া।
সহায়ক
গ্রন্থপুঞ্জিঃ
১। বাংলার নারী সংগ্রামের ইতিহাস_____________অদিতি
ফাণ্গুনী।
২। বাংলাদেশের
নারী_________________________বেবী মওদুদ।
৩। নারী ভাবনা______________________________পূরবী বসু।
৪। আলোকিত নারী___________________________আঞ্জেলা গমেজ।
৫। Dynamics of
Bangladesh Society______________Nazmul Karim.
৬। জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিল জরিপ।