ঠাকুরগাঁও পৌর এলাকার রাস্তাগুলোর বেহাল দশা!
ঠাকুরগাঁও পৌরসভার অধিকাংশ রাস্তার বেহাল দশা, এর ফলে দুর্ঘটনার কবলে পড়ছেন গাড়ি চালকসহ,পথচারী ও জনসাধারণ। চরম ভোগান্তিতে পড়ছেন স্থানীয়রা।
ঠাকুরগাঁও পৌরসভা কার্যালয়ের সূত্রমতে, পৌরসভায় মোট ১৩৫ কিলোমিটার রাস্তা রয়েছে। এর মধ্যে পাকাকরণ করা হয়েছে ৮৫ কিলোমিটার রাস্তা ও ৫০ কিলোমিটার রাস্তা এখনো কাঁচা রয়ে গেছে। পৌর শহরের ১২ টি ওয়ার্ড ঘুরে দেখা যায়, পৌরসভার ৮৫ কিলোমিটার রাস্তা পাকা হলেও এসব রাস্তার প্রায় ৮০ শতাংশই বেহাল দশা।
চৌরাস্তা থেকে কালিবাড়ী হয়ে সত্যপীর ব্রীজ পর্যন্ত সড়ক, চৌরাস্তার নরেশচৌহান সড়ক থেকে শুরু করে সেনুয়া পর্যন্ত, জেলা প্রশাসকের বাসভবনের গেটের সামনের সড়ক, শহরের প্রাণকেন্দ্র সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয় বড় মাঠে অবস্থিত জেলা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের পেছনের সড়ক, হাজীপাড়া, আশ্রমপাড়া, শাহ পাড়া, ঘোষপাড়া, গোয়ালপাড়া, নিশ্চিন্তপুরসহ আরো বেশ কয়েকটি মহল্লার প্রধান প্রধান সড়কগুলোর অবস্থা বেহাল।
এসব রাস্তা দীর্ঘ দিন ধরে সংস্কার না করায় যানবাহন চলাচলের জন্য রাস্তাগুলোর পিচের ঢালাই ও ইট উঠে গিয়ে যেখানে সেখানে ছোট বড় অসংখ্য খানাখন্দ ও গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। একটু বৃষ্টি হলেই রাস্তার বড় বড় খানাখন্দ ও গর্তগুলোতে হাঁটু সমান পানি জমে থাকে। এসব রাস্তা দিয়ে চলাচলের সময় গাড়ি পল্টি খেয়ে দুর্ঘটনার কবলে পড়চ্ছেন অনেকে। এছাড়াও পানি জমে থাকার কারণে রাস্তায় চলাচলকারীদের শরীরে কাঁদা পানি ছিটকে কাপড়-চোপড় নষ্ট হচ্ছে।
বিশেষ করে, কোমলমতি শিশুরা স্কুলে যাওয়ার সময় তাদের স্কুলের ড্রেস নোংরা হচ্ছে।
৮ মাসেও শেষ হয়নি ১৩’শ মিটার রাস্তার কাজ
এতে চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন গাড়িচালক, পথচারীসহ স্থানীয়রা। তারা স্থানীয় সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদেরকে এসব রাস্তা দ্রুত সংস্কারের দাবি জানিয়েছেন।
পৌরসভার ২ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা মোঃ শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘হ্যাডস এর মোড় থেকে গোয়ালপাড়া শাপলা স্কুল পর্যন্ত রাস্তাটির বেহাল দশা। ২০০২ সালে একবার এই রাস্তার কাজ করা হয়েছিল। রাস্তার কাজ হওয়ার কিছুদিন পরেই আবার রাস্তার অবস্থা আগের মতোই। তারপর থেকে এই রাস্তার আর কোন কাজ হয়নি। বর্ষা এলেই এই রাস্তার যেখানে সেখানে হাটু পরিমাণেরও বেশি পানি জমে থাকে। রাস্তাটি ঠিক করার বিষয়ে মেয়র ও কাউন্সিলরকে বারবার বলা হলেও এ পর্যন্ত কোন কাজ হয়নি। তাদের বলতে গেলে তারা বলেন, বরাদ্দ না থাকলে কি আমরা নিজের পকেটের টাকা খরচ করে রাস্তা সংস্কার করবো। রাস্তাটার এমন অবস্থা হয়েছে যে এ রাস্তা দিয়ে রিক্সা,গাড়ি ঠিক মতো চলতে পারে না। এমনকি হাঁটাচলাও করা যায় না।’
পৌর শহরের ৩ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা মোঃ মানিক মিয়া বলেন, ‘পৌরসভার অধিকাংশ রাস্তার অবস্থা খুবই খারাপ। যেখানে-সেখানে রাস্তা ভেঙ্গে গেছে। একটু বৃষ্টি হলেই এগুলোতে পানি জমে থাকে। রাস্তাঘাটে চলাফেরা করা যায় না। রিক্সা, সাইকেল ও গাড়ি নিয়ে চলাফেরা করতে অনেক কষ্ট হয়। তাই আমি সরকারসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদেরকে রাস্তাগুলো দ্রুত সংস্কার করে চলাচলের উপযোগী করার জোর দাবি জানাচ্ছি।’
৫ নং ওয়ার্ডের হাজীপাড়ার বাসিন্দা মোঃ আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘শহরের প্রাণকেন্দ্র হচ্ছে ঠাকুরগাঁও সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের বড় মাঠ। আর এখানে অবস্থিত জেলার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার। এই শহীদ মিনারের পেছনে রাস্তাটির পিচ ও ইট উঠে যাওয়ার কারণে গর্ত হয়ে গেছে। এই গর্তে পানি জমে থাকে। ফলে যাতায়াত করতে খুব কষ্ট হয় ও যানজট সৃষ্টি হয়। এগুলো ঠিক করলে আমাদের দুর্ভোগ কমতো। তিনি আরও বলেন, ইমরান বেকারীর সামনে এবং শহীদ মোহাম্মদ আলীর কবরের সামনের রাস্তা দিয়ে হেঁটে চলাফেরা করা সবচেয়ে দুর্ভোগের শিকার হতে হয়।
সোলাইমান নামে এক রিক্সা চালক বলেন, ‘আমি প্রতিদিন পৌরসভার বিভিন্ন সড়কে রিকশা চালায়, কিন্তু পৌরসভার প্রায় সব রাস্তার অবস্থা খুবই খারাপ। এসব রাস্তা দিয়ে রিক্সা চালালে ঘন ঘন গাড়ি নষ্ট হয়ে যায়,ঠিকমতো চালানো যায় না। রিক্সা চালাতে খুব কষ্ট হয়। অনেক সময় রিকশা পল্টি খেয়ে উল্টেও যায়।
পৌরসভার রাস্তাগুলোর বেহাল দশা ও মেরামতের বিষয়ে পৌর মেয়র আঞ্জুমান আরা বেগম বন্যা বলেন, ইতোমধ্যে ঠাকুরগাঁও পৌরসভা এলজিএসপি প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। এটির চূড়ান্ত অনুমোদন হয়তো আগামী বছরের জানুয়ারিতে পাবো এবং অনুমোদন পেলে ফেব্রুয়ারিতেই এর কাজ শুরু করতে পারবো। এই প্রকল্পে থাকছে, রাস্তা, ড্রেন, লাইটিং ব্যবস্থা ও ফুটপাত তৈরি। এই প্রকল্পে আমরা মেইন মেইন কিছু রাস্তা সংস্কার করার জন্য অন্তর্ভুক্ত করেছি।
এছাড়াও তিনি বলেন, এর আগের মেয়র বিএনপি’র ছিলেন। তাই তিনি রাস্তাগুলো তেমনভাবে সংস্কার করতে পারেননি। আমি মেয়রের দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকেই চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি রাস্তাগুলো সংস্কার করার। টেন্ডার ও বাজেট এলেই ১২টি ওয়ার্ডেরই রাস্তাঘাট নতুন করে তৈরি করা হবে এবং মানুষ সুন্দর ও ভালো ভাবে চলাচল করতে পারবে।