ভুরুঙ্গামারীতে মাদকের সয়লাব ধংসের মুখে যুব সমাজ।
ষ্টাফ রিপোর্টার ভুরুঙ্গামারীঃ বৃহত্তর রংপুর বিভাগের কুড়িগ্রাম জেলায় অধিকাংশ মাদক ঢুকছে ভূরুঙ্গামারী সীমান্ত দিয়ে। আর এই মাদক বিভিন্ন হাত ঘুরিয়ে চলে যাচ্ছে দেশের অভ্যন্তরে। সীমাস্ত এলাকায় মাদকদ্রব্য সস্তা ও সহজলভ্য হওয়ায় মাদকাসক্ত হয়ে পড়েছে উঠতি বয়সী স্কুল, কলেজ গামী শিক্ষার্থী, যুবক ও শ্রমিক শ্রেণির মানুষেরা।
ভূরুঙ্গামারী থানা পুলিশের সূত্র মতে,
গত জুলাই মাসে ৯০ পিচ ইয়াবা ২ গ্রাম হিরোইন ও ১ কেজি ৬শ গ্রাম মাদকসহ তিনজনকে আটক ও এ বিষয়ে ৪ টি মামলা করা হয়েছে। তারমধ্যে দুটি বিজিবি কর্তৃক ও দুটি থানা পুলিশ মামলা করেছে।
কুড়িগ্রাম মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তরের তথ্যঅনুযায়ী, গত জুলাই মাসে তারা ১৮৫.১৭৫ কেজি গাজা, ইয়াবা ট্যাবলেট ২৫৩২, ফেন্সিডিল ৭৫ বোতল, চোলাই মদ ১২ লিটার, টাপেন্টাডল ট্যাবলেট ৩২৬ পিচ, হেরোইন ৭৫ গ্রাম, ওয়াস ৮০০ লিটার, বিলাতি মদ ৪০ বোতল, মোট মামলার সংখ্যা-২২৪টি, আসামীর সংখ্যা ২৪১ জন।
কুড়িগ্রাম জেলা পুলিশ আটক করেছে- ৭০৯.৩২৯ কেজি গাজা , ইয়াবা ট্যাবলেট ২৫২৯১, ফেন্সিডিল ১২৭২ বোতল, চোলাই মদ ৪০ লিটার, টাপেন্টাডল ট্যাবলেট ৩২৬ পিচ, প্যাথেডিন ইনজেকশন ৪০০ পিস, হেরোইন ১৫৯.৮৫ গ্রাম, বিলাতি মদ ১৮৯ বোতল, মোট মামলার সংখ্যা-৩৯৬টি, আসামীর সংখ্যা ৪৯৩ জন।
র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ান আটক করেছে- ৫৮ কেজি গাজা, ইয়াবা ট্যাবলেট ১৪১২৭, ফেন্সিডিল ৬৪ বোতল, হেরোইন ৩২ গ্রাম, মামলার সংখ্যা ২৩, আসামীর সংখ্যা ২৭ জন।
বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ আটক করেছে ১৪২ কেজি গাজা , ইয়াবা টেবলেট ৮৩৬১ পিচ, ফেন্সিডিল ৯৭১ বোতল, হেরোইন ৬৮.৬২ গ্রাম,বিলাতি মদ ১৬৫ বোতল, মোট মামলার সংখ্যা-১২০টি, আসামীর সংখ্যা ১০৯ জন।
ভূরুঙ্গামারী উপজেলাটি তিন দিক থেকে ইন্ডিয়া / ভারত সীমান্ত বেষ্টিত হওয়ায় এ উপজেলার বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে অবাধে আসছে মদ, গাঁজা, হেরোইন, ইয়াবাসহ বিভিন্ন ধরনের মাদক। প্রতিদিন লক্ষ লক্ষ টাকার মাদক কেনা বেচা হয় এ উপজেলার সিমান্তে জিরো পয়েন্টে । মাদক ব্যবসা এমন মাত্রায় পৌঁছে গেছে যে, জায়গায় বসে অর্ডার করলেই বাড়িতে চলে আসে মাদক।
অভিযোগ রয়েছে, মাদকের ব্যবসার সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছে স্থানীয় রাজনৈতিক সংঘঠনের নেতাকর্মী, অনেক জনপ্রতিনিধি ও প্রভাবশালী ব্যক্তিরা। আর এইজন্যই এলাকার সাধারন এমনকি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরাও মাদক সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে ভয়ে মুখ খুলতে সাহস পায়না।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার ১০টি ইউনিয়নের প্রায় অর্ধশত স্পটে মাদকের ব্যবসা চলছে।
মাদকের শক্তিশালী সিন্ডিকেটের মাধ্যমে চলছে এই ব্যাবসা। সন্ধ্যার পর এসব স্পটে বসে মাদকের ভাসমান হাট। জয়মনিরহাট ইউনিয়নের শিংঝাড় খাসের ভিটা, ত্রিমোহনী সংলগ্ন ব্যাপারীহাট, বাউসমারী মাদ্রাসার দক্ষিনে পুর্ব দিকের শিবুর পাড় গামী রাস্তা, ভোলা মোড়ের পঞ্চিম মুখ গামী রাস্তা, অষ্টমী ঘাট ও বকুলতলী এলাকা, লালব্রীজেরপুর্ব পাড় হতে পুরাতন রেললাইনের দুপাড়, সদর ইউনিয়নের সোনাতলী, মানিককাজী ঘাটের এপার-ওপার, ফকির পাড়া, লাকি সিনেমাহল পাড়া, গার্লস্কুল পূর্বমোড়, ডিগ্রী কলেজের উত্তর পাশে, নলেয়া, চর নলেয়া ও মধুছন্দা সিনেমা হলের পাশে, পাথরডুবী ইউনিয়নের বাঁশজানি ওপেন বর্ডার , দিয়াডাঙ্গা, শিলখুড়ি, চর-ভূরুঙ্গামারী ইউনিয়নের নতুনহাট বাজার ও বাবুর হাট বাজারের পাশের কয়েকটি বাড়ি, তিলাই ইউনিয়নের দুধকুমোর নদের চরে খোচাবাড়ি এলাকায়, ভোটঘাটি একটি জায়গায়, পাইকেড়ছড়া ইউনিয়নের পাটেশ্বরী ও ফুটানীবাজারের আশে পাশের এলাকা,হেলিপোট,দক্ষিন তিলাইর ঢাকাইয়া পাড়ার কয়েকটি বাড়িতে, শিলখুড়ির পাগলাহাট বাজার, দিয়াডাঙ্গা,উত্তর ধলডাঙ্গা ও নদী বিচ্ছিন্ন কাজিয়ারচর শালঝোড়ে এবং সোনাহাট স্থল বন্দরের আশপাসসহ, উপজেলার প্রায় অধিকাংশ এলাকাতেই মাদকের ব্যাবসা চলছে।
জানা যায়, ভারতীয় সীমান্ত থেকে মাদক পাচার করে বাংলাদেশের আনার ক্ষেত্রে দুদেশের প্রায় শতাধিক চোরাকারবারী সক্রিয় ভাবে কাজ করছে। মাদক ব্যবসায়ীরা ভূরুঙ্গামারী উপজেলার কয়েকটি রুটে ভাগ করে নিরাপদে তাদের ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। এগুলো হলো শিংঝাড় থেকে মানিককাজি হয়ে বাগভান্ডার ও ছোট খাটামারী পর্যন্ত ফেনসিডিল আনার হাইওয়ে হিসেবে ব্যবহ্নত। মানিক কাজী, পাথরডুবি ও বাশঁজানী হয়ে দিয়াডাঙ্গা পর্যন্ত রুটটি গাঁজার রুট হিসেবে ব্যবহ্নত।কাজিয়ারচর, শালঝোড়, ধলডাঙ্গা, পাগলারহাট ও উত্তর তিলাই দিয়ে আসে মদ। এছাড়াও ছোট ছোট চালানে প্রায় সব রুট দিয়ে মদ আসে।
কাজিয়ারচর, তিলাইয়ের ঢাকাইয়া পাড়া, চর-ভূরুঙ্গামারী হয়ে সোনাহাট স্থলবন্দর দিয়ে আসে হিরোইন ও ইয়াবার চালান। এসব মাদক সীমান্ত পেরিয়ে সড়ক পথে শহরে আসে। পরে বাস, মাইক্রোবাস, ট্রাক,জ ভ্যান-লরিতে করে দেশের বিভিন্ন স্থানে চলে যায় এসব মাদকের চালান।
পুলিশ ও মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর মাঝেমধ্যে অভিযান চালিয়ে গাঁজা, হেরোইন, মদ ও ইয়াবাসহ মাদককারবারিকে আটক করলেও চিহ্নিত বড় বড় মাদক ব্যবসায়ীরা থাকছে ধরা ছোঁয়ার বাইরে।
ভূরুঙ্গামারী সরকারি কলেজ পাড়ার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েক ব্যাক্তি বলেন আমাদের বাড়ির পাশেই দিনে রাতে মাদক কেনা বেচা ও মাদক পানের ধুম পড়ে যায়। মাদকের গন্ধে বাড়িতে থাকাই দায় হয়ে যায়। কিন্তুু মাদকসেবীদের ভয়ে নীরব হয়ে আছি। নাম প্রকাশের ভয়ে পুলিশকেও জানাতে পারছিনা।
সম্প্রতি মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের একটি সেমিনারে প্রতিদিন অভিাবকরা মাদকসেবন কারী সন্তানের দ্বারা নির্যাতনের শিকার হয়ে বিচার নিয়ে আসছেন। শুধু তাই নয় অতিরিক্ত মাদক সেবন করে পাগলার হাটে এক ব্যক্তি মৃত্যুর অভিযোগও ওঠে আসে। এ বিষয়ে ভূরুঙ্গামারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আলমগীর হোসেন বলেন, মাদকের বিষয়ে আমাদের জিরো টলারেন্স নীতি অব্যাহত আছে। এ বিষয়ে কোন আপোষ করবনা। মাদক নির্মূলে সবার সহযোগিতা কামনা করেন তিনি।
কুড়িগ্রাম মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তর কুড়িগ্রামের সহকারী পরিচালক আবু জাফর বলেন, মাদক নির্মূলে সচেতনতা বৃদ্ধিতে জেলার বিভিন্ন উপজেলায় জনপ্রতিনিধি, গনমাধ্যমকর্মী ও স্থানীয় সুধীমহল নিয়ে কর্মশালা করছি। জেলার মধ্যে একটি মাত্র অফিস এবং জনবল অতি সামান্য।
তবে কাউকে ছার দেওয়া হবে না।