আগামী সোমবার থেকে ঢাকাসহ সারা দেশে কঠোর লকডাউন শুরু হচ্ছে। করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) সংক্রমণ রোধকল্পে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত কঠোর এই লকডাউন পালন করা হবে বলে জানিয়েছেন প্রধান তথ্য কর্মকর্তা সুরথ কুমার সরকার। এ সময় জরুরি পরিষেবা ছাড়া সব সরকারি-বেসরকারি অফিস বন্ধ থাকবে। জরুরি পণ্যবাহী ছাড়া সবধরনের যানবাহন চলাচলও বন্ধ থাকবে। তবে, অ্যাম্বুলেন্স ও চিকিৎসাসংক্রান্ত কাজে যানবাহন শুধু চলাচল করতে পারবে। জরুরি কারণ ছাড়া বাড়ির বাইরে কেউ বের হতে পারবেন না। গণমাধ্যম এই লকডাউনের আওতামুক্ত থাকবে। এ বিষয়ে আরো বিস্তারিত আদেশ আজ শনিবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে জারি করা হবে বলে প্রধান তথ্য কর্মকর্তা জানিয়েছেন।
তবে, জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন জানিয়েছেন, সোমবার থেকে এক সপ্তাহের কঠোর লকডাউন সারা দেশে দেয়া হচ্ছে। এক সপ্তাহ পর পরিস্থিতি বুঝে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। মানুষকে স্বাস্থ্যবিধি মানাতে কাজ করবে পুলিশ, বিজিবির পাশাপাশি সেনাবাহিনীও মোতায়েন করা হতে পারে বলে জানান প্রতিমন্ত্রী। আজ শনিবার এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে। এর আগে গত বৃহস্পতিবার কোভিড-১৯ কারিগরি পরামর্শক কমিটির সভাপতি অধ্যাপক মোহাম্মদ সহিদুল্লাহ স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে সারা দেশে ১৪ দিনের ‘শাটডাউন’ এর সুপারিশ করা হয়। এ বিষয়ে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলেন, ‘শাটডাউন’ নয়, এটি ‘বিধিনিষেধ’ হিসেবেই বাস্তবায়ন করা হবে। তিনি বলেন, ‘সরকারের পক্ষ থেকে অনেক পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। ঢাকার আশপাশের সাত জেলাসহ বিভিন্ন জায়গায় স্থানীয়ভাবে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। ঢাকা থেকে সড়ক, রেল ও নৌপথে যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এখন আরো কঠোর বিধিনিষেধ জারি করা হবে, এটি সারা দেশব্যাপী হবে। তাহলে হয়তো সংক্রমণের চেইনটা ভাঙা সম্ভব হবে।’
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা চাইব মানুষ ঘরে থাকুক। এটি সবাইকে মেনে নিতে হবে। সবাই যদি বাসায় থাকি, তাহলে সংক্রমণের চেইনটা ভেঙে যাবে এবং সেটাই আমাদের উদ্দেশ্য। যথেষ্ট পরিকল্পনা নিয়েই এটি আমরা বাস্তবায়ন করতে চাই, যাতে চলাচলের ওপর নিয়ন্ত্রণটা কার্যকর হয়।’
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে গত ৫ থেকে ১১ মে পর্যন্ত বিধিনিষেধ আরোপ করে সরকার। সেটি পরে ১৩ এপ্রিল পর্যন্ত বাড়ানো হয়। এরপর ১৪ এপ্রিল থেকে শুরু হয় ‘কঠোর’ বিধিনিষেধ। বিভিন্ন শর্তারোপ ও শিথিল করে কয়েকবার এ বিধিনিষেধের মেয়াদ বাড়ানো হয়। সর্বশেষ গত ১৬ জুন বিধিনিষেধের মেয়াদ প্রায় এক মাস বাড়িয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। শুরুতে বিধিনিষেধ বাস্তবায়নে সরকার কঠোর থাকলেও আস্তে আস্তে নমনীয় হতে দেখা যায়। এ কারণে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সরকারের দেয়া নির্দেশনা এখন আর মানা হচ্ছে না। সে ক্ষেত্রে কিভাবে নতুন করে বিধিনিষেধ বাস্তবায়ন করা হবে, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।
নতুন বিধিনিষেধে সরকারি-বেসরকারি সব অফিস ও দোকানপাট বন্ধ রাখার চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে বলেও জানান জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী। তবে গার্মেন্ট ও কলকারখানা বন্ধ রাখা হবে কি না, সে বিষয়ে কিছু জানাতে পারেননি তিনি। ফরহাদ হোসেন বলেন, শাটডাউন নয়, এটি বিধিনিষেধ হিসেবেই বাস্তবায়ন করা হবে। যেটাই বলেন না কেন, এটি কঠোর বিধিনিষেধ।