শ্রমিক অসন্তোষের জেরে বুড়িমারি স্থল বন্দর দিয়ে ভারতে পন্য রপ্তানি বন্ধ রয়েছে।

 শ্রমিক অসন্তোষের জেরে বুড়িমারি স্থল বন্দর দিয়ে ভারতে পন্য রপ্তানি বন্ধ রয়েছে।

 





মিজানুর রহমানঃ ভারতের চ্যাংরাবান্ধা স্থলবন্দরে শ্রমিক অসন্তোষের জেড়ে বুড়িমারি স্থল বন্দর দিয়ে তিন দিন ধরে  বাংলাদেশী পণ্য রপ্তানি বন্ধ রয়েছে।এতে বাংলাদেশী ব্যবসায়ীরা আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন।


 ঈদের আগে বাংলাদেশি পণ্য নিয়ে যাওয়া ট্রাক গুলো ভারতের শ্রমিক অসন্তোষের কারণে এখনও খালাস করা সম্ভব হয়নি, দুর্ভোগের আশঙ্কায় নতুন করে কোন ট্রাক চালক বাংলাদেশী পন্য নিয়ে ভারতের চ্যাংড়াবান্ধা বন্দরে যেতে রাজি হচ্ছে না। ফলে বাংলাদেশী রপ্তানি কারক ব্যবসায়ীরা ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন।


বুড়িমারী শুল্ক স্টেশন ও স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, কাস্টমস্ ক্লিয়ারিং অ্যান্ড ফরওয়ার্ডিং এজেন্ট (সিঅ্যান্ডএফ) অ্যাসোসিয়েশন, বুড়িমারী স্থলবন্দর আমদানি-রপ্তানি গ্রুপ,বিষয়টী নিশ্চিত করেছেন।


জানা গেছে, চ্যাংরাবান্ধা স্থলবন্দরে ভারতের তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠন ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল তৃণমূল ট্রেড ইউনিয়ন কংগ্রেস (আইএনটিটিইউসি), ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল ট্রেড ইউনিয়ন কংগ্রেস (আইএনটিইউসি) ও বামফ্রন্টের শ্রমিক সংগঠন সেন্টার অব ইন্ডিয়ান ট্রেড ইউনিয়ন (সিটু) এবং ট্রেড ইউনিয়ন কোঅরডিন্যাশন সেন্টার (টিইউসিসি)-সকল ট্রাকে  পণ্য বোঝাই ও খালাসের লোড-আনলোডিংয়ের কাজ করে আসছে। সম্প্রতি তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠন তাঁদের শ্রমিক সংগঠনে শ্রমিকের সংখ্যা বেশি এজন্য বেশি কাজ দাবী করে এ বিষয়টি বামফ্রন্টের শ্রমিক সংগঠন সিটু এবং টিইউসিসি না মেনে প্রতিবাদ করে। একপর্যায়ে সবক’টি শ্রমিক সংগঠনের মিছিল পাল্টা মিছিলে উত্তপ্ত হয়ে উঠে স্থলবন্দরের পরিবেশ। এতে প্রবল উত্তেজনায় পুরো চ্যাংরাবান্ধা স্থলবন্দর অচল হয়ে পড়ে। শ্রমিক সংগঠন গুলোর কাজের সমন্বয়তা নিয়ে বণিবনা না হওয়ায় পাল্টাপাল্টি মিছিল-সমাবেশ এবং আন্দোলনে গত তিনদিন ধরে পণ্য খালাস ও বোঝাই করার কাজ বন্ধ থাকে। পরিস্থিতি শান্ত রাখতে চ্যাংরাবান্ধা স্থলবন্দরের নিকটবর্তী মেখলিগঞ্জ থানা, কুচলিবাড়ী থানা অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করে পরিস্থিতি শান্ত রাখার চেষ্টা করছেন।


 


এদিকে ঈদের আগে বাংলাদেশ থেকে যাওয়া প্রায় শতাধিক পণ্যবাহী ট্রাক আনলোড না হওয়ায় চরম ভোগান্তিতে পড়েছে ট্রাক চালক হেল্পারগন।ঈদের ছুটি ,সাপ্তাহিক ছুটি শেষে নতুন করে গত শনিবার বাংলাদেশ থেকে ১৫-২০ টি ট্রাক পণ্য নিয়ে ভারতের চ্যাংরাবান্ধা স্থলবন্দরে যায়, আগে আটকা পড়া এসব বাংলাদেশী ট্রাক এবং নতুন করে যাওয়া ট্রাক কোনটাই   ভারতে শ্রমিক অসন্তোষের জেড়ে  ট্রাক আনলোড করা যায়নি।ফলে নতুন করে কোন বাংলাদেশী ট্রাক পন্য নিয়ে ভারতে যেতে না চাওয়ায় সকল রপ্তানি বানিজ্য বন্ধ হয়ে গেছে।এতে বাংলাদেশী চালক হেল্পার ভারতের বন্দরে মানবেতর জীবন যাপন করেছে।অন্যদিকে রপ্তানী পন্য ব্যবসায়ীরা বিপুল টাকার  ক্ষতির মুখে পড়েছেন।


 এ ঘটনার প্রতিবাদে সোমবার (১৮ জুলাই) ভারত থেকে পণ্য আমদানি বন্ধ রাখে বাংলাদেশি আমদানি- রপ্তানিকারকেরা। অপরদিকে ভারতে বাংলাদেশি পণ্য নিয়ে গিয়ে আটকে থাকা ট্রাক গুলো হতে পণ্য খালাস না হওয়া পর্যন্ত এবং দেশে ফিরে না আসা পর্যন্ত আর কোনো রপ্তানি পণ্য নিয়ে ভারতে না যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশি ট্রাক চালকেরা।


বুড়িমারী কাস্টমস্ ক্লিয়ারিং অ্যান্ড ফরওয়ার্ডিং এজেন্ট (সিঅ্যান্ডএফ) বন্ধু ট্রেডার্সের  সত্বাধিকারী সামীম খান বলেন,পণ্য নিয়ে ভারতে ১০-১২ দিন ধরে পড়ে থাকলে গাড়ি চালক ও ব্যবসায়ী প্রচুর ক্ষতির মুখে পড়ে। গাড়ির অতিরিক্ত ভাড়া গুনতে হয়, স্থলবন্দরে রাখার ভাড়া দিতে হয় এমনকি যথাসময়ে পণ্য খালাস করা না গেলে পণ্য নষ্ট হয়ে যায়। চরম ক্ষতি হয়। এজন্য ব্যবসায়ী ও চালকেরা পণ্য আমদানি ও রপ্তানি বন্ধ রেখেছে।’

ভারতের চ্যাংরাবান্ধা স্থলবন্দরের একাধিক ব্যবসায়ী জানান, ‘শ্রমিক অসন্তোষের কারণে দুই দেশের ব্যবসা বানিজ্য  ক্ষতি হচ্ছে। ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে মহকুমা প্রশাসনের সাথে যোগাযোগ করা হয়েছে। সমস্যা সমাধানে শ্রমিক সংগঠনের প্রতিনিধিদের নিয়ে গত তিনদিনে বেশ কয়েকবার বসা হয়েছে। দ্রুত সমাধান হবে বলে আমরা আশা করছেন তারা’



বুড়িমারী স্থল শুল্ক স্টেশন কাস্টমস্ সহকারী কমিশনার (এসি) জে এম আলী আহসান বলেন, ‘খোঁজ নিয়ে জেনেছি ভারতের চ্যাংরাবান্ধা স্থলবন্দরে শ্রমিকদের মধ্যে কিছু সমস্যার কারণে ক’দিন ধরে পণ্য বোঝাই এবং খালাসের কাজ বন্ধ থাকে। আজ সোমবার (১৮ জুলাই) ওই দেশের প্রশাসন শ্রমিকদের নিয়ে বসেছে, আশা করছি সমস্যার সমাধান হবে।’

Post a Comment

Previous Post Next Post